
আগে নবি-রাসুলদের আমলে রোজা কেমন ছিল?
জুমবাংলা ডেস্ক : ভোজন কৃচ্ছ্রতার প্রচলন ছিল বিভিন্ন নবী (আ.) যুগে। পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা : ‘হে বিশ্বাসীরা, তোমাদের জন্য সিয়ামের (রোজা) বিধান দেওয়া হলো, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যেন তোমরা ধর্মভীরুতা অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
প্রিয় নবী (সা.)-এর জীবনে রোজার বিধান তিনটি ধারায় বিকশিত—
প্রিয় নবী (সা.) মদীনায় এসে আশুরার রোজা রাখেন। এটাই প্রিয় নবী (সা.)-এর জীবনে প্রথম ফরজ রোজা।
প্রিয় নবী (সা.) চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়্যামি বিজে’র রোজা রাখতেন।
৬২৪ খ্রি. ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৪ শাবান রমজানে বিরতিহীনভাবে রোজা রাখা ‘গুরুতর অসুস্থ ও মুসাফির’ ছাড়া সব সক্ষম মুসলমানের জন্য ফরজসংক্রান্ত আয়াত নাজিল হয়। তখন প্রিয় নবী (সা.) নিজে রোজা রাখা শুরু করেন, তাঁর উম্মতকে রোজার নিয়মরীতি শিক্ষা দেন।
এ ছাড়া প্রিয় নবী (সা.) সাহরি-ইফতারবিহীন ‘সাওমি বিসাল’ নামক রোজা পালন করতেন। পূর্ববর্তী নবী রাসুলের যুগে রোজার প্রচলন :
আদম (আ.)
পৃথিবীতে এসে আদম হাওয়া (আ.) খাবারের সন্ধান না পেয়ে রোজার নিয়ত করেন। তারিখটা ছিল দশ মহররম। বেহেশতে থাকাকালীন আদম হাওয়াকে (আ.) একটি গাছের কাছে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। তাঁরা ওই গাছের ফল খেয়ে মহান আল্লাহর নিষেধ ভঙ্গের মাধ্যমে যেন সংযম তথা মানব-ইতিহাসে সর্বপ্রথম রোজা ভঙ্গ করলেন। ওই গাছের ফল খাওয়ার প্রভাব তাঁদের মধ্যে ছিল এক মাস। এ জন্যই সম্ভবত, উম্মতে মুহাম্মদির জন্য এক মাস রোজা রাখা ফরজ।
নুহ (আ.)
নুহ (আ.)-এর অনুসারীদের জন্য বছরে ৪০টি রোজা ফরজ ছিল। এ ছাড়া নুহ (আ.)-এর যুগে মাসে তিনটি রোজা পালনের বিবরণ আছে।
ইব্রাহিম (আ.)
ইব্রাহিম (আ.)-এর প্রতি রমজানের ১ তারিখ সহিফা অবতীর্ণ হয়। এ জন্য তিনি রমজানের ১ তারিখ রোজা রাখতেন। তাঁর অনুসারীদের জন্য ১, ২ ও ৩ রমজান রোজা রাখা ফরজ ছিল। নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তি স্মরণে ১০ মহররম তিনি (আ.), তাঁর অনুসারীদের জন্য রোজা রাখা ফরজ ছিল। ইব্রাহিম (আ.), ইসমাঈল (আ)-কে কোরবানির স্মরণে ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজসহ মোট সাত দিন ইব্রাহিম, ইসমাঈল, ইসহাক (আ.)-এর উম্মতের জন্য রোজা ফরজ ছিল।
দাউদ (আ.)
দাউদ (আ.)-এর প্রতি রমজানের ১২ তারিখ পবিত্র জাবুর অবতীর্ণ হয়। জাবুর অবতীর্ণের মাস রমজানের তিন দিন ও প্রতি শনিবার দাউদ (আ.)-এর উম্মতের জন্য রোজা ফরজ ছিল।
মুসা (আ.)
মুসা (আ.)-এর প্রতি রমজানের ৬ তারিখ পবিত্র তাওরাত অবতীর্ণ হয়। পবিত্র তাওরাত প্রাপ্তির জন্য মুসা (আ.) তুর পাহারে অবস্থানকালে মোট ৪০ দিন রোজা রাখেন।
ইবন আব্বাস (রা.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী, মুসা (আ.)-এর রোজা রাখার দিনগুলো ছিল জিলকদের ৩০ দিন ও জিলহজের ১০ দিন। এ ছাড়া ১০ মহররম তিনি (আ.), তাঁর অনুসারীদের জন্য রোজা ফরজ ছিল।
সুলাইমান (আ.)
সুলাইমান (আ.) সৃষ্টিকুলের সবার ভাষা বুঝতেন, এমন মুজিজা, বৈশিষ্ট্যের কৃতজ্ঞতায় তিনি সারা বছর রোজা রাখতেন। কারো কারো মতে, সুলাইমান (আ.)-এর অনুসারীদের জন্য ৯ দিন রোজা রাখা ফরজ ছিল।
ইউসুফ (আ.)
ইউসুফ (আ.) তাঁরই ভাইদের ষড়যন্ত্রে অন্ধকার কূপে নিক্ষিপ্ত হন। ওই ঘটনার স্মরণে ৪০ দিন রোজা রাখা ইউসুফ (আ.)-এর উম্মতের জন্য ফরজ ছিল। এ ছাড়া ইউসুফ (আ.)-এর উম্মতের জন্য বছরে তিন দিন রোজা রাখা ফরজ ছিল।
ইসা (আ.) ও অন্যদের যুগে
ইসা (আ.)-এর প্রতি রমজানের ১৮ তারিখ পবিত্র ইনজিল অবতীর্ণ হয়। বর্ণিত আছে, ইসা (আ.), উম্মতে মুহাম্মদির জন্য ‘হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রজনী’ লাইলাতুল কদরের তাৎপর্যের কথা জানবার পর ১৮ রমজান থেকে মাসের শেষাবধি রোজা রাখতেন। এ ছাড়া ইসাও (আ.) মুসার (আ.) মতো ৪০ দিন ও আশুরার রোজা রাখতেন।
ইসা (আ.)-এর জন্মকাহিনি আলোচনায় জানা যায়, মরিয়ম (আ.) ‘নির্বাক উপবাসব্রত’ পালন করেছিলেন। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা, মরিয়ম (আ.) ইশারায় বলেছিলেন, ‘আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে রোজা রেখেছি…।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত : ২৬)। এ ছাড়া ইউসুফ (আ.)-এর উম্মতের জন্য সাতটি রোজা ফরজ ছিল। আর ইদ্রিস (আ.) প্রায় সারা জীবন রোজা রেখেছিলেন।
লেখক : মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ, সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর