আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনকে কত দূর সহযোগিতা করবে যুক্তরাষ্ট্র?

সম্ভাব্য বাজেট ঘাটতি পূরণে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর প্রতি ৫৫ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছেন ইউক্রেনীয় নেতারা। এই বাজেট ঘাটতির কারণে ইউক্রেনের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার হুমকিতে রয়েছে। যদিও রণক্ষেত্রে দখলদার রুশবাহিনীকে ধীরে ধীরে পিছু হটতে বাধ্য করছে ইউক্রেনীয় সেনারা।

কিয়েভ সূত্রগুলো মার্কিন সাময়িকী নিউজউইককে জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় বাজেট ঘাটতির এক-তৃতীয়াংশ এবং ২০২৩ সালের বাজেটের প্রায় অর্ধেক পূরণ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এই সহযোগিতার পরিমাণ হবে যথাক্রমে ১৮ ও ২৮ বিলিয়ন ডলার।

ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিলে এই প্রস্তাবে রিপাবলিকদের ভ্রু কুচকে যেতে পারে। রিপাবলিকান শিবির থেকে ইউক্রেনের জন্য বিস্তৃত আর্থিক সহযোগিতা প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে শুরু করেছে এবং প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাটরা মস্কোর সঙ্গে আরও সংলাপের আহ্বান জানাতে শুরু করেছেন।

স্ট্যাটিস্টা-এর তথ্য অনুসারে, ইউক্রেনকে এখন পর্যন্ত ৫২ বিলিয়ন ডলার সহযোগিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে আর্থিক সহযোগিতা ১৫ বিলিয়ন ডলার, ২৭ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহযোগিতা এবং মানবিক সহায়তা ৯ বিলিয়ন ডলার। ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। জিডিপির অংশ নিরিখে ইউরোপীয় কয়েকটি দেশ ইউক্রেনকে বেশি সহযোগিতা প্রদান করেছে।

ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ওলেগ উস্তেঙ্কো বলেছেন, ইউক্রেনের আরও বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাদের আর কোনও পথ নেই।

সাম্প্রতি জনমত জরিপে ইউক্রেনের প্রতি মানুষের সমর্থন আগের মতোই রয়েছে। তবে কংগ্রেসের উভয় পক্ষে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ ইঙ্গিত দিচ্ছে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন আর্থিক সহযোগিতা অফুরান থাকবে না। এবারের গ্রীষ্মে প্রতিনিধি পরিষদে ইউক্রেনের জন্য ৪০ বিলিয়ন ডলার সহযোগিতা প্যাকেজে ৫৭টি ভোট বিপক্ষে গেছে, সিনেটে বিপক্ষে পড়েছে ১১ ভোট। বিপক্ষে ভোটদাতারা সবাই রিপাবলিকান।

এমন অবস্থায় ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি এবং অনেক মার্কিন নাগরিক জীবনযাপনে হিমশিম খাওয়ার ফলে প্রতিটি নতুন সহযোগিতা প্যাকেজ আরও নির্জীবতা হাজির করছে।

রিপাবলিকান সিনেটর র‍্যান্ড পল প্রশ্ন তুলেছেন, আমরা যখন নিজেদের বাজেট ঘাটতি পূরণ করতে পারছি না তখন কেন প্রত্যাশা করা হচ্ছে ইউক্রেনের বাজেট ঘাটতির এক-তৃতীয়াংশ বা বেশি আমরা পূরণ করব?

তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রবীণ নাগরিক তাদের অবসর সঞ্চয়ের এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করে ফেলেছেন এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা পেনশন সামঞ্জস্য বজায় রাখার ফলে তাদের কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। আমাদের প্রবীণরা যখন ভুগছেন তখন ইউক্রেনের পেনশন ব্যবস্থার জন্য সহযোগিতা প্রদান আমার কাছে দায়িজ্ঞানহীন মনে হচ্ছে।

এমন মনোভাব শুধু র‍্যান্ড পল একার নয়। যদিও এখনও তা সংখ্যালঘিষ্ট। তিনি ও অপর দশ জন রিপাবলিকান সিনেটর ৪০ বিলিয়ন ডলারের সহযোগিতা প্যাকেজের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। মূল্যস্ফীতি ও তদারকি নিয়ে নজরদারির কথা উল্লেখ করে তারা বিপক্ষে অবস্থান নেন।

রিপাবলিক পার্টির এক কংগ্রেসনাল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজইউককে বলেছেন, ইউক্রেনকে যদি আরও অঙ্কের সহযোগিতার প্রস্তাব আনা হয় তাহলে বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া নেতাদের সংখ্যা বাড়তে পারে এবং প্রতিকূলতার মুখে পড়বে।

তিনি বলেন, বেসামরিক সহযোগিতা যত বড় হবে সেই অনুপাতে বিরোধিতার মুখে পড়তে পারে। রিপাবলিকানরা এখনও ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতার পক্ষে। যদি আমরা সরাসরি বাজেটে সহযোগিতা করি তাহলে তা কঠিন থেকে কঠিনতর হতে পারে। এখন পর্যন্ত পক্ষে পর্যাপ্ত ভোট রয়েছে। কিন্তু ইউরোপীয় বা আইএমএফ-এর পক্ষ থেকে বেসামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর তাগাদা অনেকের মধ্যে বাড়ছে।

চলতি মাসে ইউক্রেনকে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ২০২৩ সালের বাজেটের জন্য ইউক্রেন প্রয়োজনীয়তার কথা তুলেছে এই সহযোগিতা সেটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এর আগে ২০২২ সালের জন্য ৯ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইইউ। তবে ইইউ’র প্রতিশ্রুত তহবিল পেতে বিলম্ব হওয়া নিয়ে ইউক্রেনীয় নেতারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, ইইউ’র তুলনায় মার্কিন সহযোগিতা দ্রুত পেয়েছে কিয়েভ।

রণক্ষেত্রে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। ছবি: এপি

উস্তেঙ্কো বলছেন, প্রত্যাশিত মার্কিন সহযোগিতা ‘এখনও একটি উন্মুক্ত প্রশ্ন’। জেলেনস্কির আরেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, কিয়েভ প্রত্যাশা করছে ২০২৩ সালের বাজেট ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র ‘৫০-৫০’ পূরণ করবে।

উভয় উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন, ইউক্রেনে আর্থিক সমস্যা একটি উপাদান হলো বাজেট ঘাটতি। কিয়েভের প্রয়োজন আরও সামরিক সহযোগিতা। একই সঙ্গে অবকাঠামো পুনর্গঠনেও সহযোগিতা প্রয়োজন।

চলতি ইউক্রেনীয় প্রধানমন্ত্রী ডেনিস স্মাইহ্যাল ক্ষতিগ্রস্ত হাসপাতাল, স্কুল, পরিবহন, জ্বালানিসহ অন্যান্য অবকাঠামো দ্রুত পুনরুদ্ধারে ১৭ বিলিয়ন ডলার সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।  

রাশিয়া যদি যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ায় তখন ব্যয় আরও বাড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলেনস্কির উপদেষ্টা বলেছেন, রুশ দখলে পারমাণবিক দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকা জাপোরিজ্জিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র মেরামতে কয়েক বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হতে পারে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র নিউজউইককে ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বদলীয় ব্যাপক সমর্থনের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, যতদিন প্রয়োজন আমরা ইউক্রেনকে সহযোগিতা করব। ২০২৩ সালে ইউক্রেনকে সহযোগিতার পরিকল্পনা করছি আমরা। কংগ্রেস, মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা আমরা নিয়মিত পর্যালোচনা করছি। এসব আলোচনার মূল কেন্দ্রে রয়েছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা।

ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়

অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে মার্কিন সহযোগিতার গুরুত্ব নিয়ে ইউক্রেনীয়দের মনে কোনও ধোঁয়াশা নেই। উস্তেঙ্কো বলেন, আমি খুব নিশ্চিত রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবে। প্রতিটি দলের ভেতরে এগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তারা ইউক্রেনকে দেওয়া সহযোগিতা বাদ দেবে।

অপর উপদেষ্টা বলেন, আমি মনে করি না কেজিবি শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদেরকে সহযোগিতার বিরোধিতা করবে রিপাবলিকানরা।  সম্প্রতি প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে খোলা চিঠিতে মস্কোর সঙ্গে আরও সংলাপের আহ্বান জানানো নিয়েই তিনি বেশি উদ্বিগ্ন।

সমালোচনার মুখে দ্রুত চিঠিটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে ৩০ জন ডেমোক্র্যাটের স্বাক্ষর ছিল। প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য প্রমিলা জয়পাল বলেন, এটির খসড়া কয়েক মাস আগে প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত যাচাই ছাড়াই সম্প্রতি তা প্রকাশ হয়েছে।

রণক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জনে ব্যর্থ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উত্তেজনা বৃদ্ধির পদক্ষেপ ও হুমকি দিয়ে পরিস্থিতি নিজের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি চাইছেন ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমাদের ঐক্যে ফাটল ধরাতে। এতে তিনি সফল হলে তা হবে ক্রেমলিনের জন্য বিশাল কৌশলগত বিজয়। শুধু তাই নয়, এর ফলে কিয়েভ সামরিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক নির্ভরশীলতা হারাতে পারে।

ইউক্রেনের রাডা পার্লামেন্টের সদস্য ও এর পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ার ওলেক্সান্ডার মেরেজকো বলেন, পুতিন কৃত্রিম বিশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে পছন্দ করতে পারেন। ইউক্রেন নিয়ে তার যেকোনও দ্বিধা আমাদের জন্য উপহার। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বৃহত্তম মিত্র ও সহযোগিতাকারী। ইউক্রেন নিয়ে মার্কিন রাজনীতিতে যেকোনও বিভাজন আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

কয়েকজন বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনে ক্যাপিটল হিলে আরও কয়েকজন রিপাবলিকানকে নিয়ে আসতে পারে। যা কিয়েভে লবিস্টদের জন্য জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

মেরেজকো বলেন, আমাদের প্রত্যাশা মধ্যবর্তী নির্বাচন ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সহযোগিতায় কোনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। আমরা আরও আশা করি কংগ্রেসে ইউক্রেনের বন্ধুর সংখ্যা কমবে না, বাড়বে।

Source link

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Stream TV Pro News - Stream TV Pro World - Stream TV Pro Sports - Stream TV Pro Entertainment - Stream TV Pro Games - Stream TV Pro Real Free Instagram Followers PayPal Gift Card Generator Free Paypal Gift Cards Generator Free Discord Nitro Codes Free Fire Diamond Free Fire Diamonds Generator Clash of Clans Generator Roblox free Robux Free Robux PUBG Mobile Generator Free Robux 8 Ball Pool Brawl Stars Generator Apple Gift Card Best Android Apps, Games, Accessories, and Tips Free V Bucks Generator 2022