বাংলাদেশ

কীর্তনখোলার তীরে শিশুদের ভালোবাসার ২০ শহীদ মিনার

ছোট ছোট শিশু টিফিনের টাকা থেকে একটি অংশ সারা বছর ধরে জমায়। অপেক্ষায় থাকে কবে একুশে ফেব্রুয়ারি আসবে। মায়ের মুখের ভাষায় কথা বলার জন্য জীবন বিলিয়ে দেওয়া ভাষাশহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ মিনার নির্মাণে তাঁদের এই সম্মিলিত উদ্যোগ। মহান একুশে ফেব্রুয়ারির দিন এই কোমলমতি শিশুরা দলে দলে ভাগ হয়ে শহীদ মিনার বানায়, রং ও রঙিন কাগজ দিয়ে বাহারি রঙে সাজায়।

বরিশাল নগরের রসুলপুর চরের শিশুরা মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে কয়েক বছর ধরে এমন ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন করে আসছে। তাদের আয়োজনে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান, নৃত্য, আবৃত্তি, পুরস্কার বিতরণসহ নানা অনুষ্ঠান। এই শিশুদের সবাই দরিদ্র আর নিম্ন আয়ের পরিবারের।

কীর্তনখোলা নদীর তীরে বিচ্ছিন্ন এক জনপদ এই রসুলপুর। কীর্তনখোলা নদীর বাঁকে জেগে ওঠা এই চরের নাম রসুলপুর কলোনি (বস্তি)। এলাকাটি বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। কয়েক বছর আগেও এই চরে শহীদ মিনার বলতে কিছু ছিল না। শিশুরাও জানত না শহীদ মিনার কী এবং কেন এতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। কিন্তু এখন সেই শিশুরা জানে শহীদ মিনার কাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত, বাংলা ভাষার জন্য জীবন দেওয়া শহীদদের নাম ও ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট। ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভিন্নতর এক আবেগ নিয়ে এখন তারা শহীদ মিনার বানায়, রঙে রঙে রাঙায়। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। শিশুদের চিন্তা মূর্ত হয়ে ওঠে একুশের ভোরে।

শহীদ মিনার তৈরির পাশাপাশি এসব শিশু ৫ টাকা, ১০ টাকা করে চাঁদা তুলে এবং ঘরে ঘরে থেকে চাল-ডাল এনে আয়োজন করে খাবারের। রান্না করে খিচুড়ি এবং তা রান্না শেষে বিতরণ করা হয় সবার মধ্যে।

বরিশাল নগরের রসুলপুর চরটি নগর থেকে বিচ্ছিন্ন এক জনপদ। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দুই দিন ধরে চরের শিশুরা লেগে যায় কাদা, মাটি, রং, কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরির কাজে। একে একে মূর্ত হয়ে নানা রঙের বাহারি স্মৃতির মিনার। এবারও শিশুরা এই চরে ২০টি শহীদ মিনার নির্মাণ করেছে। পুরো আয়োজনকে উৎসাহিত করতে সেরা শহীদ মিনার বাছাইয়ের মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, কলোনির অলিগলিতে, ঘিঞ্জি পরিবেশের মধ্যে সামর্থ্য অনুযায়ী গড়ে তোলা হয়েছে শহীদ মিনার। মাটির বেদিতে কাঠ, ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে প্রতিটি মিনার। কাঠের গুঁড়ার সঙ্গে রং মিশিয়ে লেখা হয়েছে ভাষাশহীদদের নাম। অঙ্কিত হয়েছে মানচিত্র। রঙিন কাগজে আবৃত করা হয়েছে শহীদ মিনার এলাকা। এক ভিন্ন পরিবেশ ফুটে উঠেছে শিশুদের কোমল হাতের ছোঁয়ায়।

রসুলপুর কলোনির বাসিন্দারা জানান, এই আয়োজন শুরু হয়েছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখার সদস্যসচিব চিকিৎসক মনীষা চক্রবর্তীর হাত ধরে। ১২-১৩ বছর আগে শহীদ মিনার নির্মাণের এমন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। এর পর থেকে প্রতি একুশে ফেব্রুয়ারি মানেই কীর্তনখোলা নদীর তীরে রসুলপুর কলোনিতে ভিন্ন এক আয়োজন। পুরো আয়োজনটি শিশুদের কেন্দ্র করে হলেও ছোট-বড় সবাই এতে সহায়তা করেন। মাতৃভাষার প্রতি মমত্ববোধ, সৃজনশীলতার বিকাশে এই আয়োজন এখন এই চরের শিশুদের কাছে এক প্রতীক্ষিত এক উৎসব।

স্থানীয় বাসিন্দা চুন্নু মিয়া বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারির এক সপ্তাহ আগে থেকেই শিশুরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। টিফিনের জমানো টাকা দিয়ে গাঁদা ফুল ও রঙিন কাগজ কিনে সাজায় শহীদ মিনার।

লাবনী আক্তার নামের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী জানায়, ‘মনীষা দি আমাদের এ শহীদ মিনার দেখে পুরস্কার দেয়। শুধু পুরস্কার না, শহীদ মিনার সম্পর্কেও ধারণা দেয়।’
সোনিয়া বেগম নামের স্থানীয় এক গৃহবধূ বলেন, ‘মনীষা আপা নিজে থেকে এ প্রতিযোগিতার পুরস্কারের অর্থ দেন প্রতিবছর। এই প্রতিযোগিতায় যে শিশুরা কেবল শুধুই শহীদ মিনার তৈরি করে, তা নয়। শিশুরা এর মধ্য দিয়ে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের জীবন, আত্মত্যাগ সম্পর্কেও জানতে পারে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Stream TV Pro News - Stream TV Pro World - Stream TV Pro Sports - Stream TV Pro Entertainment - Stream TV Pro Games - Stream TV Pro Real Free Instagram Followers PayPal Gift Card Generator Free Paypal Gift Cards Generator Free Discord Nitro Codes Free Fire Diamond Free Fire Diamonds Generator Clash of Clans Generator Roblox free Robux Free Robux PUBG Mobile Generator Free Robux 8 Ball Pool Brawl Stars Generator Apple Gift Card Best Android Apps, Games, Accessories, and Tips Free V Bucks Generator 2022