
টিম ম্যানেজমেন্টকে ‘রিহ্যাব’ মনে হয় মাশরাফির
দুই মাস আগে বাংলাদেশের কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার মতে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সংস্কৃতি বুঝবে এমন কোচকেই নিয়োগ দেওয়া উচিত। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অধিনায়কত্বের ভুল ও বাজে ফিল্ডিংয়ে ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার পর আবারও কোচ নিয়ে মন্তব্য করেছেন সাবেক এই অধিনায়ক। এবার তো কোচের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার কাছে এমন হারের পেছনে মাশরাফি দায় দেখছেন কোচিং স্টাফদের। ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি সেইসব বিস্তারিত লিখেছেন, ‘ম্যাচের একদিন পার হয়ে গেলো, কতো কথা শুনলাম যার অনেক কিছুরই যুক্তি আছে, কারণ দল হেরে গেলে মানুষ তার প্রতিক্রিয়া নিজের মতো করে দেবে এটা স্বাভাবিক। আমার মনেও অনেক কিছুই এসেছে। তবে দুটি জিনিস খুব বেশি মনে হচ্ছে, ম্যাচটা হারার জন্য কি শুধুই রিয়াদ আর লিটনই দায়ী আর কোন বিষয় কি নেই?’ মাশরাফি মোট তিনটি বিষয়কে সামনে এসেছেন।
১.“ম্যাচের ৯.৪ ওভার ৭৯ রানে ওদের ৪ উইকেট, ঠিক তখন আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ড্রিংকস ব্রেক। তার মানে কোচ মাঠের ভিতর আসবে। আমাদের কোচও এসেছিল। তাহলে উনি এসে রিয়াদের (মাহমুদউল্লাহ) সাথে কি কথা বলেছিল? যদি বলে থাকে, তাহলে কি সব দায় রিয়াদের?
“মানলাম, অন ফিল্ড ক্যাপ্টেন’স কল ইজ ফাইনাল। তবে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের ক্রাঞ্চ মোমেন্টে কি কোচ ডিসকাশন করে না? ক্যাপ্টেন তখন বিভিন্ন বিষয়ে চাপে থাকে। তার প্ল্যান কী, এটা কি জানতে চেয়েছিল কোচ? আর যদি কথা হয়ে থাকে, তাহলে কি কোচের প্রেস হ্যান্ডেল (প্রেস কনফারেন্সে) করা উচিত ছিল না? কারণ রিয়াদের ভুলটা ধরা হয়েছে ঠিক ঐ সময় থেকেই।” অনিয়মিত স্পিনার আফিফ হোসেনের বলেই একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু ক্যাচ নিতে পারেননি লিটন দাস। মাশরাফি এখানে দেখছেন দুর্ভাগ্যের ছোঁয়া। আর সামগ্রিকভাবে অধিনায়ক ও ফিল্ডারের পাশাপাশি তিনি দায় দেখছেন কোচেরও।
২. ম্যাচের আগে উইকেট অ্যাসেস শুধু ক্যাপ্টেন করে না, পুরো টিম ম্যানেজমেন্ট সঙ্গে থাকে। তাহলে টিম করার সময় চিন্তা করেছে উইকেট স্লো হবে, যার কারণে তাসকিনকে বসিয়ে নাসুমকে খেলানো। কিন্তু নাসুমকে পাওয়ার প্লের পর বোলিং করানো হলো না, কারণ দুজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান উইকেটে, তাহলে আগেই চিন্তা করা উচিত ছিল শ্রীলঙ্কার টপ ওর্ডারে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বেশি, তার ওপর মাঠের একপাশে মাত্র ৫৬ গজ। যখন নাসুমকে নেওয়া হয়েছে, ব্রেকের সময় কোচ রিয়াদকে কি বলেছে যে, নাসুম দলের মূল বোলার ওকে ব্যাক করো। কারণ ওই নাসুম-ই ব্রেকটা পরে দিয়েছে, ততক্ষণে ম্যাচ প্রায় শেষ।তাহলে ওই সময় কোচ কি বসে বসে কোন প্ল্যান না করে শুধু খেলা দেখেছে? আবারও বলছি, সিদ্ধান্ত রিয়াদ নিবে কিন্তু ওকে তো হেল্প করতে হবে কারণ মাঠে ক্যাপ্টেন কখনও কখনও অসহায় হয়ে পড়ে। আর ঠিক তখনই টিম ম্যানেজমেন্টকে টেকওফ করতে হয়। অন্যান্য দলে তো তাই দেখি।
৩. আরও অনেক বিষয় আছে বলা যায়, তবে লিটনের ক্যাচ মিসের কোন এক্সকিউজ দিবো না, এমনকি লিটন নিজেও দেবে না। তবে ক্যাচ মিস খেলার একটা অংশই। কিন্তু ফিল্ডিং কোচের কাছে কি এ বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাওয়া হয়? ক্যাচ মিস কি এই প্রথম হলো? ২০১৯ বিশ্বকাপের পর ম্যানেজমেন্ট এর প্রায় সবাই চাকরি হারিয়েছে স্রেফ বর্তমান ফিল্ডিং কোচ ছাড়া। তাহলে আমরা বিশ্বকাপে বা তারপর কি সেরা ফিল্ডিং সাইড হয়ে গিয়েছি? এখন টিম ম্যানেজমেন্ট দেখলে মনে হয় একটা রিহ্যাব সেন্টার, যেখানে সাউথ আফ্রিকার সব চাকরি না পাওয়া কোচগুলো একসঙ্গে আমাদের রিহ্যাব সেন্টারে চাকরি করছে। এদের বাদ দেওয়া আরও বিপদ। কারণ চুক্তির পুরো টাকাটা নিয়ে চলে যাবে। তাহলে দাঁড়ালো কী? তারা যতদিন থাকবে আর মন যা চাইবে তাই করবে। হেড কোচ এক এক করে নিজ দেশের সবাইকে আনছে, এরপর যারা অস্থায়ী ভাবে আছে তাদেরও সরাবে আর নিজের মতো করে ম্যানেজমেন্ট সাজাবে। তাও মেনে নিলাম কিন্তু হেড কোচ ম্যানেজমেন্ট এর জন্য যেভাবে স্টেপআপ করে মূল দলের জন্য তাহলে লুকিয়ে কেন? কেন তামিম, মুশফিক, রিয়াদ ভালো থাকে না। এটা ঠিক করা তার কাজ না?
শেষ দিকে মাশরাফি লিখেছেন ম্যাচ হারের ব্যর্থতা ক্রিকেটারদেরই নিতে হবে, ‘তার পরও দায় খেলোয়াড়দেরকে নিতে হয়, হবে। এটাই স্বাভাবিক, কারণ মাঠে তারাই খেলে কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার যে, খেলোয়াড়দেরকে সেরকম পরিবেশ করে দিতে হবে। তাদের কে বুঝাতে হবে তাদের বিপদে কেউ পাশে না থাকুক অন্ততো টিম ম্যানেজমেন্ট থাকবে। আমি আমার ক্যাপ্টেনসির শেষ প্রেস কনফারেন্সে বলেছিলাম, এই দলের কোচ যেই হোক না কেন, এখন এই দলের রেজাল্ট করার সময়, পরীক্ষার না। কোচের চাহিদা মেটানোর আগে আমাদের দেশের স্বার্থ দেখতে হবে। কারণ ক্রিকেট দেশের মানুষের কাছে এখন স্রেফ খেলা না, রীতিমতো আবেগে পরিণত হয়েছে।