
‘দেশকে ইকোসিস্টেমে রূপান্তরিত করতে একটু সময় লাগবে’
দেশ ডিজিটালি অনেক উন্নতি করেছে। তবে পুরো সিস্টেমটাকে ইকোসিস্টেমে রূপান্তরিত করতে একটু সময় লাগবে বলে মনে করেন ট্রাস্ট আজিয়াটা ডিজিটাল লিমিটেডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) দেওয়ান নাজমুল হাসান।
দেওয়ান নাজমুল হাসান করপোরেট সেক্টরের পরিচিত নাম। এই সেক্টরে তিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশ ও দেশের বাইরে কাজ করে এসেছেন। ডিজিটাল বিজনেস, ডিজিটাল ইকো সিস্টেম, ক্রেডিট ম্যানেজমেন্ট শাখায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তার।
এমএফএস সেক্টরের বিভিন্ন দিক, তার নিজের অভিজ্ঞতা ও এই সেক্টর নিয়ে তার ভবিষ্যৎ চিন্তা-ধারা জানিয়েছেন তিনি।
টেলিকম ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘদিনের বিচরণ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতে। স্কুল-কলেজ শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশুনা করি। তারপর পিডাব্লিউসি-তে ফিন্যান্সে। পড়াশুনা শেষ করে নরওয়ের এজেন্সিতে নোরাডে কর্মজীবন শুরু করি। এটা দারুণ অভিজ্ঞতা ছিলো। এজেন্সিটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে সাঁওতাল সম্প্রদায় নিয়ে কাজ করত। ওই সময় আমি তাদের অ্যাকাউন্ট সেকশন দেখতাম। এরপর টেলিকম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ শুরু করি যদিও আমি ফিন্যান্সের লোক। প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টিংয়ে মাস্টার্সও করি। নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে ফিন্যান্সে এমএসসি সম্পন্ন করি। রবির প্যারেন্ট কম্পানি আজিয়াটাতে তিন বছর কাজ করাসহ রবিতে দীর্ঘ ২৩ বছর কাজ করেছি। ২০২০ সালের শেষ থেকে ট্রাস্ট আজিয়াটা ডিজিটাল লিমিটেডের সিইও হিসেবে কর্মরত আছি।
ট্যাপের ধারণা কীভাবে এলো, এমন প্রশ্নের জবাবে দেওয়ান নাজমুল হাসান বলেন, বাংলাদেশে ফোন কম্পানি আসার পর বিপ্লব ঘটেছে। এতে এমএফএস সেবা সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে। রবির কর্পোরেট ফিন্যান্স হেড থাকাকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে এমএফএস নিয়ে কথা বলেছি। তবে সেসময়ে কোন গাইডলাইন ছিল না। তারা আমাকে প্রথমে এক্সপ্রেসন অফ ইন্টারেস্ট জমা দিতে বলে। আমিই প্রথম এক্সপ্রেসন অফ ইন্টারেস্ট জমা দেই। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। পুরো প্রক্রিয়ার সাথেই ছিলাম। ফিন্যান্সের লোক হওয়ার পরও রবি ডিজিটাল সার্ভিসে ডিজিটাল বিজনেস শুরু করি। ডিজিটাল সার্ভিসের সাথে এমএফএসের অনেকটা মিল। সেসময় ডিজিটাল সার্ভিসের লাইসেন্স ছিল না, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দরপত্র সংগ্রহের পর ইউটিলিটি বিল এবং টিকিট বিক্রয়সহ কিছু পরিষেবা প্রদান করতে হত। সমস্যা হলো টেলিকম এমএফএসের সাথে সেসময় ব্যবসায় করতে পারত না।
তিনি আরো বলেন, আমাদের বিকল্প ছিল রিচার্জ মানি, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে হত। দীর্ঘদিন ধরে রবিতে ডিজিটাল সেবার প্রধান ছিলাম, তারপর আমি মালয়েশিয়া চলে যাই। ট্রাস্ট আজিয়াটা ডিজিটাল লিমিটেডের শুরু থেকেই জড়িত ছিলাম। ২০১৪ সালে আজিয়াটা ডিজিটাল সার্ভিস এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। বাংলাদেশ আর্মির সাথেও আলোচনা হয়। রবি বিষয়টার সাথে জড়িত ছিলো। তবে কিছু সমস্যার কারণে ওই সময়ে আর চালু করা সম্ভব হয়নি। তখন আজিয়াটা ডিজিটাল সার্ভিস লাইসেন্স পায়। এমএফসএস লাইসেন্স অন্য সবকিছুর থেকে আলাদা। বিকাশ ২০১১ সালে পেমেন্ট সার্ভিস অপারেটরের অধীনে যাত্রা শুরু করে কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই পরিষেবাকে এমএফএসের মতো করেই সজ্ঞায়িত করে। পরে যখন ২০১৮ সালে নির্দেশিকা আসে, তখন বিকাশকে এমএফএসে রূপান্তরিত করা হয়। এমএফএসের যে গাইডলাইন ছিলো ২০২২ সালে তা আপগ্রেড করা হয়। আবার করোনা মহামারীর সময়ে এমএফএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমরা ২০২১ সালে ট্যাপের যাত্রা শুরুর পর চেষ্টা করছি দেশের একেবারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে যাওয়ার।
তিনি মনে করেন, স্বচ্ছতাই হলো ‘ট্যাপ’-এ একমাত্র ভিত্তি। ব্যবসা প্রসারে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমুহে ভিন্ন ভিন্ন স্ট্র্যাটেজি থাকবে তবে তার উদ্দেশ্য কখনোই মার্কেটের ক্ষতি করে নয়। কেননা এর মাধ্যমে কম্পানিগুলোর স্বাভাবিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা নষ্ট হয়। নিঃসন্দেহে ব্যবসা খাতে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ প্রয়োজন। তবে সেক্ষেত্রে কিছু মৌলিক বিধিমালার প্রয়োগও দরকার। এ ছাড়া প্রতিযোগিতায় কমিশনের হস্তক্ষেপ অবধারিত। না হলে এক পক্ষ বিশাল পুঁজি নিয়ে বাজারে থাকতো, আরেক পক্ষ শুধুই লাইসেন্স নিয়ে। ব্যবসার সুস্থ প্রতিযোগিতার স্বার্থে নিয়ন্ত্রণকদের নির্দেশিকা প্রণয়ন করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
ট্যাপের নতুন কোন সার্ভিস নিয়ে বর্তমানে কাজ শুরু করেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে দেওয়ান নাজমুল বলেন, আমরা ন্যানো লোন নিয়ে কাজ করছি। খুব কম সময়ের মধ্যে টাকা লোন নিতে পারে, এমনকি এক দিনের মধ্যেও। অল্প চার্জ ধরা হয়। ন্যানো লোনের বেশ কিছু সুবিধা আছে। একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি, একবার পাইকারি মাছের বাজারে গিয়েছিলাম। মাছ বিক্রেতারা বসে ছিলো এবং তাদের সাথে বেশ কয়েকজন ঋণ দাতাও ছিলো। সকালে মাছ ব্যবসায়ীরা তাদের থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার লোন করে মাছের পাইকারি বাজার থেকে মাছ কিনে। সারা দিন ধরে ওই মাছ মাছ বিক্রি করে এবং সন্ধ্যায় ৩০০ টাকা বেশিসহ লোন পরিশোধ করে।