
দেশ পরিচিতি: উগান্ডা
একটি অস্থির অতীত থাকার পরও স্থলবেষ্টিত উগান্ডা অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধির একটি দেশ হিসেবে নিজেকে পরিণত করেছে।
১৯৬২ সালে ব্রিটেনের স্বাধীনতা অর্জনের পর পূর্ব আফ্রিকার দেশটি একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গেছে। পরে তা নৃশংস সামরিক একনায়কত্বে পরিণত হয় যার অবসান হয় ১৯৭৯ সালে। ১৯৮০-র দশকে বিতর্কিত নির্বাচন এবং পাঁচ বছরের একটি যুদ্ধ বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইওওয়েরি মুসেভেনিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে।
দেশটিকে নিজেদের উত্তরাঞ্চলে ২০ বছরের নৃশংস বিদ্রোহও মোকাবিলা করতে হয়েছে। এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিল লর্ড’স রেজিস্ট্যান্স আর্মি।
এইচআইভি/এইডসবিরোধী প্রচারের জন্য দেশটি ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। এলজিবিটি সম্প্রদায় নিয়ে কঠোর অবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করে উগান্ডা।
উগান্ডার কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
রাষ্ট্রীয় নাম: রিপাবলিক অব উগান্ডারাজধানী: কামপালাজনসংখ্যা: ৩ কোটি ৫৬ লাখআয়তন: ২ লাখ ৪১ হাজার ৩৮ বর্গ কিলোমিটারভাষা: ইংরেজি (রাষ্ট্রীয়), সোয়াহিলি (রাষ্ট্রীয়), লুগান্ডা, বান্তু ও নিলোটিকগুরুত্বপূর্ণ ধর্ম: খ্রিষ্টান, ইসলামগড় আয়ু: ৫৪ বছর (পুরুষ), ৫৫ বছর নারীমুদ্রা: উগান্ডান শিলিং
নেতৃত্ব
প্রেসিডেন্ট ইওওয়েরি মুসেভেনি
১৯৮৬ সালে ক্ষমতা দখলের কোনও বিরতি ছাড়া উগান্ডা শাসন করে যাচ্ছেন ইওওয়েসি মুসেভেনি ও তার দল ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স মুভমেন্ট।
২০১১ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন। এর আগে ২০০৫ সালে সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বপালনের মেয়াদ সীমিত করার ধারা বাতিল করা হয়। ২০১৬ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়ী হন। বিরোধী দল ও স্বাধীন বিশ্লেষকরা দেশটির নির্বাচনে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগ করেছেন।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের বয়সসীমা ৭৫ ছিল। ২০১৭ সালে পার্লামেন্টে তা বাতিল করে। এর ফলে মুসেভেনি ষষ্ঠবারের মতো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন।
উগান্ডায় স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য মুসেভেনিকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। বিশেষ করে কয়েক বছরের গৃহযুদ্ধ ও সাবেক নেতা মিল্টন ওবোট এবং ইদি আমিনের নিপীড়নমূলক শাসনের পর দেশটিকে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে আসার জন্য মুসেভেনির ভূমিকা রয়েছে।
তবে ডিআর কঙ্গোর সংঘাতে ভূমিকার জন্য জাতিসংঘের সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। সর্বশেষ, সেখানকার বিদ্রোহীদের সহায়তা দেওয়ার জন্য উগান্ডা অভিযুক্ত হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম
আফ্রিকা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রদূত উগান্ডা।
দেশটির মিডিয়া সেক্টর বৈচিত্র্যময়। রয়েছে প্রায় ২০০টি বেসরকারি রেডিও স্টেশন এবং কয়েক ডজন টেলিভিশন চ্যানেল। বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকাও রয়েছে। তবে গত কয়েক বছরে এগুলোর সার্কুলেশন কমেছে।
উগান্ডার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
১৮৯৪: উগান্ডাকে একটি ব্রিটিশ প্রটেক্টরেট হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
১৯৬২: স্বাধীনতা: প্রেসিডেন্ট বুগান্ডার রাজা মুটেসা এবং প্রধানমন্ত্রী মিল্টন ওবোট। ফেডারেলবাদী সংবিধান।
১৯৬৭-৭১: মিল্টন ওবোট একটি অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখল করেন এবং উগান্ডার উপজাতীয় রাজ্যগুলো বিলুপ্ত করেন।
১৯৭১-৭৯: সামরিক নেতা ইদি আমিন ক্ষমতা দখল করেন। তার শাসনামলে কয়েক হাজার মানুষ মারা যায়।
১৯৭২: হাজার হাজার উগান্ডান এশীয়কে বহিষ্কার করেন ইদি আমিন।
১৯৭৮-৭৯: তানজানিয়া আক্রমণ করে উগান্ডা। কিন্তু তানজানিয়া প্রতিশোধ নেয়, আমিনকে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য করে।
১৯৮০-৮৫: মিল্টন ওবোট ক্ষমতায় ফিরে আসেন কিন্তু একটি সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন।
১৯৮৬: বিদ্রোহী নেতা ইওওয়েরি মুসেভেনি ক্ষমতা দখল করেন, স্থিতিশীলতার সময়কাল এবং উন্নত মানবাধিকারের সূচনা করেন।
১৯৯৫: নতুন সংবিধান রাজনৈতিক দলগুলোকে বৈধতা দেয়। তবে রাজনৈতিক কার্যকলাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রাখে।
২০০৫: গণভোট বহু-দলীয় রাজনীতিকে সমর্থন করে কিন্তু প্রেসিডেন্টের মেয়াদের সীমা বাতিল করা হয়।
২০০৮: ক্র্যাকডাউনের মুখে উগান্ডা থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয় লর্ডস রেজিস্ট্যান্স আর্মির বিদ্রোহীরা।