আন্তর্জাতিক

দেশ পরিচিতি: চীন

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন। প্রায় ৪ হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির। এমনকি বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত বেশ কিছু সংস্কৃতির উৎসও এই দেশটি।

১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টির কাছে জাতীয়তাবাদী কউমিন্টাং দল হেরে গিয়ে তাইওয়ানে আশ্রয় নেওয়ার পর ‘পিপলস রিপাবলিক অব চায়না’ নামে  স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে চীন। একই সঙ্গে তাইওয়ানে ‘রিপাবলিক অব চায়না’ নামে আরেকটি রাষ্ট্র যাত্রা শুরু করে।

চীনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয় কমিউনিস্ট নেতা মাও সেতুং কে। মাও সেতুং-এর অনমনীয় সমাজতন্ত্র অনুযায়ী চলার পর কয়েক দশক ধরে স্থবির থাকে দেশটির অর্থনীতি। পরবর্তীতে অর্থনৈতিক সংস্কার এনে আংশিক-পুঁজিবাদী অর্থনীতি গ্রহণ করে চীন। এর পরপরই বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল এবং শীর্ষস্থানীয় রফতানিকারকে পরিণত হয় দেশটি।

বৈদেশিক বিনিয়োগকারী অন্যতম প্রধান দেশ বর্তমানে চীন। পূর্ব এশিয়ার বাইরেও ক্রমবর্ধমান দৃঢ় বৈদেশিক ও প্রতিরক্ষা নীতি অনুসরণ করছে দেশটি।

কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশটির রাজনৈতিক সংস্কার ঘটেনি। দেশটির রাজনীতিতে বরাবরের মতোই শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে কমিউনিস্ট পার্টি।

 

চীনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

রাষ্ট্রীয় নাম: পিপলস রিপাবলিক অব চায়নারাজধানী: বেইজিংআয়তন: ৯৫ লাখ ৯৬ হাজার ৯৬১ বর্গ কিলোমিটারজনসংখ্যা: ১৪১ কোটিভাষা: মান্দারিন চীনা, মঙ্গোলীয়, উইঘুর, তিব্বতীয়, ঝুয়াং এবং অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষাগড় আয়ু: পুরুষ ৭৪, নারী ৭৯ বছর

 

নেতৃত্ব

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

২০১২ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও এর পর ক্ষমতায় আসেন শি। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মাও-পরবর্তী যৌথ নেতৃত্বের ঐতিহ্য বজায় না রেখে নিজের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেন তিনি। 

মাও সেতুং এর পর দেশটির সব চেয়ে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে ২০১৭ সালে নিজের ভিত্তি গড়ে তুলেন তিনি। ২০১৭ সালে চীনা সংবিধানে তার নাম ও রাজনৈতিক দর্শন লিপিবদ্ধ করা হয়।

দেশটির সংবিধান অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২ মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকার নিয়ম ছিল। ২০১৮ সালে সংবিধান সংস্কার করে এই নিয়ম বাতিল করেন তিনি। এমন পদক্ষেপের মাধ্যমে আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকার পথও উন্মুক্ত করেছেন শি।

সাংবিধানিক গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে প্রত্যাখ্যান করে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর কঠোর সীমাবদ্ধতা আরোপ করেন শি জিনপিং। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং হংকংয়ের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন তিনি। করোনা মহামারির সময়ে দেশটিতে আরোপিত ‘জিরো কোভিড নীতি’ এবং হাজার হাজার মুসলিম উইঘুর জনগোষ্ঠীকে নৃশংস পুনঃশিক্ষা শিবিরে বন্দি করার জন্য বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হন তিনি।

সংবাদমাধ্যমে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কঠোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ছবি: রয়টার্স

সংবাদমাধ্যম

বিশ্বের সব চেয়ে বড় মিডিয়া মার্কেট চীন। দেশটির মিডিয়া আউটলেটগুলোর ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে কমিউনিস্ট পার্টি। বিজ্ঞাপন ও বিপননের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যম বেশ প্রসার লাভ করলেও সম্পাদকীয় কন্টেন্টের দিক থেকে যথেষ্ট পিছিয়ে আছে।

পুনঃপ্রচার ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে বেইজিং আন্তর্জাতিক বা দেশের বাইরের খবর থেকে বিরত রাখে জনগণকে। এমনকি ‘গ্রেট ফায়ারওয়াল’ নামক ফিল্টার সিস্টেম ব্যবহার করে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্লক করে রাখে দেশটির সরকার।

প্রায় ৭৭ কোটি ২০ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে দেশটির, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। বাইদু, আলিবাবা, হেবং, টেনসেন্ট নামক তিনটি বড় কোম্পানি দেশটির মার্কেটে আধিপত্য বিস্তার করে।

টেনসেন্ট কোম্পানির উইচ্যাট নামক ম্যাসেজিং অ্যাপের বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারী প্রায় ৯০ কোটি। 

চীনের গ্রেট ওয়ালের একাংশ। ছবি: রয়টার্স

চীনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা

খ্রিষ্টপূর্ব ১৭০০-১০৪৬ অব্দ: শাং রাজবংশ উত্তর চীন শাসন করে। এটি প্রথম চীনা শাসন যেটির স্পষ্ট লিখিত রেকর্ড বিদ্যমান।

খ্রিষ্টপূর্ব ২২১-২০৬ অব্দ: সম্রাট কিন শিহুয়াংদির অধীনে প্রথমবারের মতো একীভূত চীনা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৬৪৪: উত্তর দিক থেকে মাঞ্চু আক্রমণের মাধ্যমে কিং রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯১১-১২: সান ইয়াৎ-সেনের অধীনে সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে চীনা প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হয়। তবে দেশের বেশিরভাগ অংশ যুদ্ধবাজদের দখলে থাকে।

১৯৩১-৪৫: আক্রমণ করে দখলের মাধ্যমে চীনে নৃশংস অত্যাচার চালায় জাপান।

চীনের গুরুত্বপূর্ণ শহর সাংহাই। ছবি: রয়টার্স

১৯৪৯: গৃহযুদ্ধে জাতীয়তাবাদী কউমিন্টাং দলকে পরাজিত করে কমিউনিস্ট নেতা মাও সেতুং এর নেতৃত্বে পিপলস রিপাবলিক অব চায়না (গণপ্রজাতন্ত্রী চীন) গঠিত হয়।

১৯৫৮-৬০: ‘গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড’ নীতির কারণে দেশটির কৃষি ব্যাহত হয়, অর্থনীতিতে ফাটল ধরে এবং লাখ লাখ মানুষ মারা যায়। অবশেষে এ নীতি পরিত্যাগ করা হয়।

১৯৬৬-৭৬: সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উত্থান ঘটে।

১৯৭৬: কমিউনিস্ট নেতা মাও সেতুং মারা যান। ১৯৭৭ সালে বাস্তববাদী নেতা দেং জিয়াওপিং সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক সংস্কার গ্রহণ করেন।

১৯৮৯: বেইজিংয়ের তিয়ান আনমেন স্কোয়ারে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে  কয়েকশ’ লোককে হত্যা করে সামরিক বাহিনী।

২০১০: যুক্তরাষ্ট্রের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয় চীন। বছরটির শেষ মাসে জাপানের অর্থনীতিতে কিছুটা ধস নামে।

২০১২-১৩: শি জিনপিং প্রেসিডেন্ট হন এবং পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় ক্ষমতা নিজ হাতে কেন্দ্রীভূত করেন।

Source link

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Stream TV Pro News - Stream TV Pro World - Stream TV Pro Sports - Stream TV Pro Entertainment - Stream TV Pro Games - Stream TV Pro Real Free Instagram Followers PayPal Gift Card Generator Free Paypal Gift Cards Generator Free Discord Nitro Codes Free Fire Diamond Free Fire Diamonds Generator Clash of Clans Generator Roblox free Robux Free Robux PUBG Mobile Generator Free Robux 8 Ball Pool Brawl Stars Generator Apple Gift Card Best Android Apps, Games, Accessories, and Tips Free V Bucks Generator 2022