
দেশ পরিচিতি: নেপাল
হিমালয় কন্যা নেপালের সংস্কৃতি বেশ প্রাচীন। ১৯৫০ এর দশক পর্যন্ত বহির্বিশ্বের সঙ্গে প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল দেশটির। পরবর্তীতে বহুদলীয় সংসদীয় ব্যবস্থা, মাওবাদীর উত্থান ও রাজতন্ত্রের বিলুপ্তিসহ আরও অনেক ঘটনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে নেপালকে।
ভারত ও চীন দ্বারা বেষ্টিত দেশটিতে এভারেস্টসহ বিশ্বের ৮টি সর্ববৃহৎ পর্বত অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে পর্বতগুলো ‘সাগরমঠ’ নামে পরিচিত। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ নেপাল উন্নত দেশগুলোর আর্থিক সহায়তা ও পর্যটন শিল্পের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।
২০১৫ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে নেপালে কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারান। স্মরণকালের ওই শক্তিশালী ভূমিকম্পে বহু গ্রাম ও ঐতিহ্যবাহী স্থান ধসে যায়।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
নাম: ফেডারেল ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব নেপালরাজধানী: কাঠমান্ডুআয়তন: ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫১৬ বর্গ কিলোমিটারজনসংখ্যা: ৩ কোটি ৬ লাখভাষা: প্রধান ভাষা নেপালি। অন্যান্য ভাষারও প্রচলন রয়েছে।গড় আয়ু: পুরুষদের ৬৯, নারীদের ৭২ বছর
নেতৃত্ব
বর্তমানে দেশটির প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারি।
২০১৫ সালের অক্টোবরে সংসদীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নেপালের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হন তিনি। নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির ডেপুটি নেত্রী ছিলেন তিনি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার স্বামী ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা মদন কুমার ভাণ্ডারী। ১৯৯৩ সালে মৃত্যু হয় তার।
নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রবীণ রাজনীতিবিদ পুষ্প কমল দহল নেপালের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৮-২০০৯ এবং ২০১৬-২০১৭ সালে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে জোট সরকার গঠনের মাধ্যমে মাওবাদী কেন্দ্রিক কমিউনিস্ট দল থেকে প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। নিজ দলের সংসদ সদস্য, নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (ইউনিফায়েড মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টি এবং জনমত পার্টিসহ অন্যান্য দলের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।
নেপালে রাজতন্ত্র অবসানের পর থেকে কমিউনিস্ট দলগুলো ও নেপালি কংগ্রেসসহ অন্যান্য ছোট ছোট দল পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় থেকেছে। নেপালি কংগ্রেস কিছুটা ভারতপন্থি অপরদিকে কমিউনিস্ট পার্টিগুলো চীনপন্থি।
সংবাদমাধ্যম
দেশটির সংবাদমাধ্যম ও সম্প্রচারমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতায় বিধিনিষেধ রয়েছে। অ্যাক্টিভিস্টদের মতে, সাংবাদিকরা সহিংসতার শিকার হওয়ার কারণে এ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
‘কলিউড’ নানে দেশটির ছোট একটি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আছে।
দেশটির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
১৭৬৮: গুর্খা শাসক পৃথ্বী নারায়ণ শাহ কাঠমাণ্ডু জয় করেন ও ঐক্যবদ্ধ একটি রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন।
১৮১৪-১৬: অ্যাঙ্গলো-নেপাল যুদ্ধ। পরবর্তীতে নেপালের সীমান্ত স্থাপনের চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হয়।
১৮৪৬: নেপালে ‘রানা’ নামে পরিচিত বংশানুক্রমিক শাসনের উত্থান হয়। রাজতন্ত্রের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে দেশকে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে তারা।
১৯৫০: দেশটির রাজাদের সঙ্গে জোট গঠন করে ভারত ভিত্তিক ‘রানা’ বিরোধী দল গড়ে ওঠে।
১৯৫১: ‘রানা’ শাসনের পতন হয়। ফলে রাজ্যটির সার্বভৌমত্ব আবার পুনরায় ফিরে আসে এবং নেপাল কংগ্রেস পার্টিতে রানা-বিরোধী বিদ্রোহীরা সরকার গঠন করে।
১৯৬০: রাজা মহেন্দ্র ক্ষমতায় আসেন এবং দেশটির সংসদ, সংবিধান ও দলীয় রাজনীতি স্থগিত করেন।
১৯৯১: প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে নেপালি কংগ্রেস পার্টি জয়ী হয়।
১৯৯৫-২০০৬: গৃহযুদ্ধ ও মাওবাদী বিপ্লবে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।
২০০৮: রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় নেপাল।
২০১৫: নতুন সংবিধান গৃহীত হয়। সমকামীদের অধিকার রক্ষা করা এশিয়ার প্রথম সংবিধান এটি।