
দেশ পরিচিতি: ভারত
জনসংখ্যা নিরিখে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৮ সালের মধ্যেই চীনকে ছাড়িয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশে পরিণত হবে ভারত।
ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি হিসেবে ক্রমেই আত্মপ্রকাশ করছে দক্ষিণ এশীয় পারমাণবিক ক্ষমতাধর রাষ্ট্রটি। তবে উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে দেশটিকে।
বিশ্বের প্রাচীনতম কিছু সভ্যতার কেন্দ্রস্থল ভারতীয় উপমহাদেশ। পাহাড়ী আফগান সীমান্ত থেকে বার্মার জঙ্গল এবং ভারত মহাসাগরের প্রবাল প্রাচীর পর্যন্ত বিস্তৃত সভ্যতা এই উপমহাদেশের। তাই স্বাভাবিকভাবেই ভাষা, সংস্কৃতি ও মানব বৈচিত্র্যের দিক থেকে বেশ সমৃদ্ধ দেশ ভারত।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
রাষ্ট্রীয় নাম: রিপাবলিক অব ইন্ডিয়া (ভারত প্রজাতন্ত্র)রাজধানী: নয়া দিল্লিআয়তন: ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ২৬৩ বর্গ কিলমিটারজনসংখ্যা: প্রায় ১৩৭ কোটিভাষা: হিন্দি ও ইংরেজিসহ স্থানীয় আরও অনেক ভাষা রয়েছে।গড় আয়ু: পুরুষদের ৬৮ বছর, নারীদের ৭১ বছর
নেতৃত্ব
প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু
২০২২ সালের জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন তিনি। দেশটির ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাবেক গভর্নর এই নারী এক সময়ে শিক্ষকতাও করেছেন। আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রথম কোনও ব্যক্তি হিসেবে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তিনি। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদস্য তিনি। দেশটির প্রেসিডেন্ট পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক। তবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
দুর্নীতি ও মন্থর উন্নয়নের প্রতি ক্ষোভ জন্মানোর পর হিন্দু জাতীয়তাবাদী নরেন্দ্র মোদিকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে দেশটির জনগণ।
২০১৪ সালের সংসদীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে মোদির রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। গত ৩০ বছরের মধ্যে এই প্রথম দেশটির সংসদীয় নির্বাচনে কোনও দল এককভাবে জয়লাভ করে ।
নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সফলতার সঙ্গেই গুজরাটের অর্থনীতিকে বদলে দেন মোদি। ভারতের মন্থর অর্থনীতিকেও পুনরায় সচল করার অঙ্গীকার দিয়েছিলেন তিনি।
তবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে কোনও ভূমিকা না রাখার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় ২০০১ সালে গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ১ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন মুসলিম।
কাশ্মির
ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে হিমালয় অঞ্চল কাশ্মির নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছে ভারতের। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর থেকেই কাশ্মির ইস্যু নিয়ে দুই দেশের দ্বন্দ্ব। এমনকি এই ইস্যুতে দুটি যুদ্ধও করেছে দেশ দুটি। তবে দ্বন্দ্বের অবসান হয়নি।
বর্তমান বিশ্বের কঠোর সামরিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম কাশ্মির। অঞ্চলটির কিছু অংশ ভারত, কিছু অংশ পাকিস্তান ও কিছু অংশ চীনের সীমানায় রয়েছে।
সংবাদমাধ্যম
ভারতের সংবাদমাধ্যম শিল্প বেশ সমৃদ্ধ। দেশটির সম্প্রচারমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম এবং ডিজিটাল মিডিয়া বিস্ময়করভাবে বিকশিত হচ্ছে।
ভারতের বাসা-বাড়িতে প্রায় ২ হাজার কোটি টেলিভিশন রয়েছে। দেশটিতে অসংখ্য রেডিও চ্যানেল চালু থাকলেও শুধু সরকারি অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকেই সংবাদ সম্প্রচারের অনুমোদন রয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ভারত। এক্ষেত্রে চীনের পরেই ভারতের অবস্থান।
ভারতের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ অব্দ: বেশ কিছু প্রাচীন সভ্যতা এবং সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে।
১৬০০ দশক: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যবসা করতে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করে। ভারতবর্ষের বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ১৮৫০-এর দশকের মধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে চলে যায়।
১৮৫৮: সরাসরি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে চলে যায় ভারতবর্ষ।
১৯২০: জাতীয়তাবাদী নেতা মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। পরে এ প্রতিবাদ ভারতকে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
১৯৪৭: ভারতবর্ষ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
১৯৭১: পশ্চিম পাকিস্তানের থেকে স্বাধীনতা চায় পূর্ব পাকিস্তান। স্বাধীনতা যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানকে সমর্থন করে ভারত। যুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠিত হয়।
১৯৭৪: প্রথম ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ভারত।
১৯৯০-এর দশক: উদারনৈতিক অর্থনীতি গ্রহণ করে দেশটির সরকার। বিশ্ব বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুতি নেয়। এ সময় অর্থনীতিতে কিছুটা সংস্কারও আনে দেশটির সরকার।
২০১৪: সংসদীয় নির্বাচনে বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম কোনও দল এককভাবে নির্বাচনে জয়ী হয়।
সূত্র: বিবিসি