
পায়রা সেতু : ফেরিমুক্ত বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক
পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী এলাকায় পায়রা নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ১১৮ কোটি টাকা। দেশের পঞ্চম বৃহত্তম সেতু এটি। মজার বিষয় হচ্ছে, দেশে প্রথমবারের মতো এ সেতুতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বমানের বেশকিছু প্রযুক্তি, যা সেতুর ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে আগেভাগেই অবগত হওয়ার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে।
পায়রা সেতুতে যুক্ত করা হয়েছে বিশ্বমানের হেলথ মনিটরিং ও পিয়ার প্রটেকশন সিস্টেম। এর ফলে যেকোনও ধরনের মাত্রাতিরিক্ত ভারী যান সেতুতে উঠলে সঙ্গে সঙ্গে হেলথ মনিটরিং সিস্টেম থেকে সিগন্যাল পাওয়া যাবে। একইভাবে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প ও বজ্রপাতসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেগুলোতে সেতুর ক্ষতি হতে পারে এ ধরনের আশঙ্কা থাকলেও সিস্টেম সিগন্যাল দেবে। সেতুটিতে ব্যবহার করা হয়েছে সোলার সিস্টেম যা পরিবেশবান্ধব এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
সেতুটির কিছু শৈল্পিক বিশেষত্ব হলো সেতুটি বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় স্প্যান বিশিষ্ট সেতু। যার দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার। পদ্মা সেতুতে ১২০ মিটার পাইল করা হলেও পায়রা সেতুতে ১৩০ মিটার পাইল করা হয়েছে।
নদীর মাঝখানে একটি এবং দুইপাড়ে দুটি পিয়ারের ওপর মূল সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে।
পিয়ারের দুই পাশে ১২টি ক্যাবল সংযুক্তসহ মোট ৩৬টি ক্যাবল ব্যবহার করা হয়েছে সেতুটিতে। নদীর গতিপথ সচল রাখতে পিয়ারগুলো ২০০ মিটার দূরত্বে স্থাপন করা হয়েছে। যাতে নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত না হয়।
পটুয়াখালীসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক চাকাকে সমৃদ্ধ করতে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করবে পায়রা-লেবুখালী সেতু। এখন কেবল চোখের সামনে আলাদীনের চেরাগের মতো দক্ষিণাঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিবর্তনের অপেক্ষা। জিডিপি’র ১০ শতাংশের ১৫ থেকে ২৫ ভাগ যোগান আসবে এই সেতু থেকে। দক্ষিণের জনপদে যাতায়াত, শিল্প, বাণিজ্য ও পর্যটনে অকল্পনীয় ভূমিকা রাখবে সেতু টি ।
আগামী বছর থেকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কথা রয়েছে। সেটি চালু হলে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোয় সড়ক পথে চলাচলে আর কোন ফেরি থাকবে না। এই সেতুর ফলে পায়রা নদী বন্দর এবং কুয়াকাটা পর্যটন সৈকতের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। পায়রা নদী বন্দর পুরোপুরি ব্যবহার করা শুরু হলে মালামাল বহনের ক্ষেত্রে এই সেতুটি বিশাল ভূমিকা রাখবে।
করোনা ঝুঁকি, সময় বর্ধন এবং নানাবিধ জটিলতার মধ্যেও প্রকল্পের পূর্ত কাজের চুক্তি মূল্য থেকে ৫২ কোটি ২৫ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, পায়রা সেতু নামটা আমি পছন্দ করেছি । তিনি আরো বলেন : যদি আমি নিজে উপস্থিত থেকে ওই সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ী চালিয়ে একটু যেতে পারতাম, বা ওই সেতুতে নেমে যদি একটু দাঁড়াতে পারতাম, পায়রা নদীটা দেখতে পারতাম, যে নদীতে আমি সবসময় স্পিডবোটে চড়েছি, সেখানে যদি একটু ব্রিজের ওপর দিয়ে যদি একটু হাঁটতে পারতাম, তাহলে খুব ভালো লাগতো।