খেলা

পিছু হটলো ওয়াগনার গ্ৰুপ, মস্কো যাত্রা স্থগিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দিনভর উত্তেজনা ও নানা নাটকীয়তার পর রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদের গ্রুপ ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন বলেছেন, “রাশিয়ায় রক্তপাত” এড়াতে তার ভাড়াটে সেনাদের মস্কোমুখী যাত্রা স্থগিত করা হয়েছে।

প্রিগোজিনের দাবি, তার সেনারা যখন মস্কো থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার (১২০ মাইল) দূরে, তখন তিনি এ যাত্রা বন্ধের নির্দেশ দেন।

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর আলোচনা প্রস্তাবের পর এক অডিও বার্তায় প্রিগোজিন যাত্রা স্থগিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। খবর আল জাজিরা’র।

লুকাশেঙ্কোর প্রেস সার্ভিসের উদ্ধৃতি দিয়ে রুশ গণমাধ্যম জানিয়েছে, উত্তেজনা প্রশোমনে রাশিয়ার ভূখণ্ডে আর অগ্রসর না হতে বেলারুশ প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে ওয়াগনার।

এদিকে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েস ভেলে জানিয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সমঝোতার পরই ওয়াগনার গ্ৰুপের মস্কো অভিমুখে যাত্রা স্থগিত করেছেন তাদের নেতা প্রিগোজিন। সমঝোতার অংশ হিসাবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সার্গেই শুইগু ও সেনা প্রধান গেরাসিমভ পদত্যাগ করতে পারেন, তবে এমন খবরের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

মস্কো যাচ্ছে ওয়াগনার বাহিনী, বাধা দিলেই লড়াই
ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকেই রাশিয়ার ভরসার কেন্দ্রে ছিলো ভাড়াটে সেনা দল ওয়াগনার গ্রুপ। রাশিয়ার নিয়মিত সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি ওয়াগনার গ্রুপের সেনারাও তীব্র লড়াইয়ে অংশ নিয়ে আসছে ইউক্রেন রণাঙ্গনে। সবশেষ বাখমুত যুদ্ধেও নেতৃত্বে দিয়েছে ওয়াগনার।

যাদের হাতে একদিন বন্দুক তুলে দিয়েছিলেন রুশ নেতা পুতিন, সেই বন্দুকের নল এখন ঘুরেছে ক্রেমলিনের দিকে। প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করে বসেছে। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সাথে এক নাটকীয় লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছে ভাড়াটে আধাসামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ।

যদিও ওয়াগনারের মালিক রুশ ধনকুবের ও ব্যবসায়ী ইয়েভজেনি প্রিগোজিন দাবি করছেন, তার লড়াই শীর্ষ রুশ সমর নেতাদের বিরুদ্ধে, পুতিনের বিরুদ্ধে নয়। পশ্চিমা মিডিয়ার দাবি, এরিমধ্যে ইউক্রেনের সীমান্তের লাগোয়া রাশিয়ার রোস্তভ দখলে নেয়ার পরও এগুচ্ছে ওয়াগনার যোদ্ধারা।

পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, শনিবার দুপুরে রাশিয়ার আর এক শহর লিপেৎস্কও দখলে নিয়েছে প্রিগোজিনের সেনারা। মস্কো থেকে ওই শহর মাত্র ছয় ঘণ্টার পথ। প্রিগোজিন জানান, তাদের ২৫ হাজার সৈন্য রাশিয়ার ‘দুষ্ট সেনা প্রধানদের’ শায়েস্তা করতে মস্কোতে যাবে।

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, তাদের পথে কেউ বাধা দিলে তার বাহিনী তাদের ধ্বংস করবেন। তারা মস্কোর দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। অন্যদিকে, তার বিরুদ্ধে ‘সশস্ত্র অভ্যুত্থানের চেষ্টা’র অভিযোগ করে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

বিভিন্ন সংবাদ ও গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে প্রায় ২৫ হাজার ওয়াগনার যোদ্ধা মস্কো দখলের অভিযানে নেমেছে। এই পরিস্থিতিতে তাদের রুখতে রুশ ‘চপার’ (যুদ্ধ হেলিকপ্টার) আকাশপথ থেকে ধারাবাহিক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।

শনিবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, তার দেশের ভবিষ্যৎ হুমিকের মুখে আছে। রুশদের প্রতারণার মাধ্যমে অপরাধমূলক দুঃসাহসিক কাজে জড়ানো হয়েছে। কারও কারও উচ্চ আকাঙ্ক্ষা তাদের গভীর রাষ্ট্রদ্রোহীতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান প্রিগোজিনের দিকে ইঙ্গিত করে একথা বললেও তার নাম উল্লেখ করেননি তিনি। রাশিয়ার সমাজকে যারা বিভক্ত করছে তাদের ‘অনিবার্য শাস্তির’ বিষয়ে সতর্ক করেন তিনি। রাজধানী মস্কো ও অন্য বেশ কয়েকটি শহরে সন্ত্রাসবিরোধী শাসন জারি করেছেন পুতিন।

চলতি সপ্তাহেই ইউক্রেনের সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে বড় অভিযান শুরু করে বিদ্রোহী ওয়াগনার বাহিনী। প্রিগোজিনের ভাড়াটে যোদ্ধারা শনিবার সকালে ইউক্রেন সীমান্তের অদূরে পশ্চিম রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহর ভোরোনেজ দখল বলে দাবি করে পশ্চিমা মিডিয়া।

এর আগে ওয়াগনার বাহিনী শুক্রবার ইউক্রেন সীমান্ত লাগোয়া রোস্তভ-অন-ডন শহরের দখল নিয়েছিল। ওই এলাকা থেকে মস্কোর দূরত্ব প্রায় হাজার কিলোমিটার। এর পর মস্কোর দিকে আরও কয়েকশো কিলোমিটার এগিয়ে গিয়েছে তারা।

এই শহরে আছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডের মূল কেন্দ্র। রুশ বাহিনীকে সামরিক রসদ সরবরাহের ক্ষেত্রেও এই শহরটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে, এটি এখন ওয়াগনার গ্রুপের দখলে। যদিও ক্রেমলিন এখনো কিছু বলেনি।

ভরোনেজের অবস্থান রোস্তভ এবং মস্কোর ঠিক মাঝামাঝি। ভরোনেজ অঞ্চলের সরকার গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়ক এম-৪ ব্যবহার না করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরগুলো এই মহাসড়কের মাধ্যমেই সড়কপথে মস্কোর সঙ্গে যুক্ত।

রোস্তভ দখলের পর প্রিগোজিন ঘোষণা দেন, তিনি যে কোন মূল্য রুশ সেনা বাহিনীর নেতৃত্বের পতন ঘটাবেন। এরই মধ্যে তিনি ইউক্রেন থেকে সীমান্তের লাগোয়া রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলে প্রবেশ করেছেন এবং একটা রাশিয়ান হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছেন বলে দাবি করছেন।

তিনি জানান, তার সেনারা বিভিন্ন শহর ঘেরাও করে নেবে এবং মস্কোর দিকে যাত্রা শুরু করবে যদি প্রতিরক্ষা প্রধান সের্গেই শুইগু এবং ভ্যালেরি গেরাসিমভ তার সাথে দেখা না করেন। তবে যে ভিডিওতে তিনি এসব বার্তা দিয়েছেন সেটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

৬২ বছর বয়সী ইয়েভগেনি প্রিগোজিন বিভিন্ন সময় যুদ্ধের কৌশল নিয়ে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের সমালোচনা করে আসছেন। শুক্রবার তিনি দাবি করেন, তার সেনাদের ওপর মিসাইল দিয়ে হামলা চালিয়েছে মস্কো। এই হামলায় জড়িতদের শাস্তি দেয়ার শপথও নেন তিনি।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই মিসাইল হামলার কথা অস্বীকার করেছে এবং প্রিগোজিনকে সব রকম ‘অবৈধ কার্যক্রম’ বন্ধের আহবান জানিয়েছে। সশস্ত্র বিদ্রোহের অভিযোগ তুলে ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে ক্রেমলিন। তবে সামরিক অভ্যুত্থানের কথা অস্বীকার করেছেন ওয়াগনার প্রধান।

পরিস্থিতি বিবেচনায়, মস্কোতে সন্ত্রাস-দমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পুরো রাশিয়াতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে এবং মস্কোর রাস্তায় সামরিক ট্রাকের দেখা মিলছে। বিভিন্ন স্থানে সামরিক কনভয় মোতায়েনর করা হয়েছে।

পশ্চিমা বিশ্লেষকরা এই লড়াইটাকে দেখছেন রাশিয়ার ক্ষমতার শীর্ষে থাকা দু’জনের মধ্যে লড়াই হিসেবে। একদিকে ডাকসাইটে ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান, অন্যদিকে রাশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, যারা দু’জনই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

Source link

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Stream TV Pro News - Stream TV Pro World - Stream TV Pro Sports - Stream TV Pro Entertainment - Stream TV Pro Games - Stream TV Pro Real Free Instagram Followers PayPal Gift Card Generator Free Paypal Gift Cards Generator Free Discord Nitro Codes Free Fire Diamond Free Fire Diamonds Generator Clash of Clans Generator Roblox free Robux Free Robux PUBG Mobile Generator Free Robux 8 Ball Pool Brawl Stars Generator Apple Gift Card Best Android Apps, Games, Accessories, and Tips Free V Bucks Generator 2022