আন্তর্জাতিক

পুতিন-জেলেনস্কি নয়, যুদ্ধ থামাতে পারে কেবল ইউক্রেনীয়রা

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এক বছর ধরে চলছে। যেহেতু দুইপক্ষের ‘কাঙ্ক্ষিত’ বিজয় অসম্ভাব্য বলে মনে হচ্ছে, তাই অনেকেই এখন আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধের নিষ্পত্তির আহ্বান জানাচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, চীন দ্রুত একটি শান্তি পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত অবসানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো: একটি স্থিতিশীল ও টেকসই শান্তি অর্জনের জন্য দুই পক্ষের দাবিগুলো কীভাবে ভারসাম্যপূর্ণ হতে পারে? প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া যাবে ইউক্রেনের সাধারণ জনগণের কাছে। ইউক্রেনের সাংবিধানিক গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে যেকোনও শান্তি চুক্তিতে জনগণের অনুমোদন প্রয়োজন। যদি তাদের উপেক্ষা করা হয়, তবে স্থিতিশীল শান্তি চুক্তির সম্ভাবনা অনেক কম।

আটকে আছে সমঝোতা

যুদ্ধ দ্বিতীয় বছরে প্রবেশ করার পরও ইউক্রেনে রাশিয়ার দখলকৃত ভূখণ্ডের প্রশ্নে আলোচনা অচলাবস্থায় পড়েছে। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাশিয়া পূর্ব এবং দক্ষিণ ইউক্রেনের চারটি অধিকৃত অঞ্চলকে নিজেদের মানচিত্রে সংযুক্ত করে। এর আগে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে নিজেদের অংশ ঘোষণা করেছিল রাশিয়া।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ডিসেম্বরে ১০ দফার শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছিলেন। এতে রাশিয়াকে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা এবং ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড থেকে রুশবাহিনী প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। জেলেনস্কি বলেছিলেন, এটি না হওয়া পর্যন্ত কোনও আলোচনা সম্ভব না। আলোচনায় বসার আগ্রহের কথা এসেছে পুতিনের কণ্ঠ থেকেও। তবে তার দাবি, ইউক্রেনকে অবশ্যই দখলকৃত চারটি ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড থেকে রাশিয়ার বলে স্বীকৃতি দিতে হবে।

প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ পশ্চিমা নেতারা আলোচনার মাধ্যমে একটি টেকসই সমাধানে মস্কো-কিয়েভ দুই দেশকেই তাগিদ দিয়ে আসছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের মধ্যস্থতায় কিয়েভ-মস্কো কয়েক দফা বৈঠক করেছিল। কিন্তু তাতে অগ্রগতি খুবই সামান্য। এক পর্যায়ে উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

এবার এই দৌড়ে এগিয়ে এসেছে চীন। যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি শান্তি পরিকল্পনা হাজির করেছে বেইজিং। তাদের পরিকল্পনায় সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার নীতিগুলোকে জোর দেওয়া হয়েছে। তবে চীনের কাছে রাশিয়ার স্বার্থ বেশি প্রাধান্য পাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এমন প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনকে তার সার্বভৌম ভূখণ্ডের মর্যাদা নিয়ে আলোচনার জন্য চাপ দেওয়া উচিত কি-না, তা নিয়ে বিতর্ক থাকবেই। 

বিস্মৃত ইউক্রেনীয় জনগণ

এসব শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতাকে ভুলে যাওয়া হচ্ছে। একটি স্থিতিশীল চুক্তি শুধু ইউক্রেন, রাশিয়া, চীন এবং পশ্চিমের মধ্যে কূটনৈতিক চুক্তি হতে পারে না। আইনি ও রাজনৈতিক উভয় কারণেই ইউক্রেনীয় জনগণের সমর্থন একান্ত প্রয়োজন।

আইনত, ইউক্রেন একটি সাংবিধানিক গণতন্ত্রের দেশ। এর অর্থ হলো, ইউক্রেনের সার্বভৌম অঞ্চলের (ক্রিমিয়াসহ) যে কোনও আনুষ্ঠানিক অধিকার ত্যাগ করতে সংবিধান পরিবর্তন প্রয়োজন হবে। এমন পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন গণভোট। প্রকৃতপক্ষে, ইউক্রেনের সংবিধানের ১৫৬ অনুচ্ছেদে এ ধরনের মৌলিক পরিবর্তন আনতে হলে ইউক্রেনজুড়ে গণভোট আয়োজন করা প্রয়োজন।

রাজনৈতিকভাবে, যেকোনও স্থিতিশীল শান্তি চুক্তির জন্য অবশ্যই ব্যাপক জনগণের সমর্থন থাকতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে অন্য কোনও নেতা তা থেকে সরে আসতে পারেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এটা জানেন।

২০২২ সালের মার্চে তিনি রাশিয়ার এমন এক প্রতিশ্রুতি রাজি ছিলেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কাছে থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিয়তার বিনিময়ে ইউক্রেন ন্যাটো জোটে যোগ দেবে না বলে আশ্বাস থাকবে। তিনি বলেছিলেন, শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তটি নেওয়ার এখতিয়ার তার নেই। এমন প্রতিশ্রুতি জনগণের কাছ থেকে অনুসমর্থিত হতে হবে।

জেলেনস্কির এই কথার রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের শান্তিচুক্তিতে অজনপ্রিয় কোনও ধারা থাকলে তা ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক জীবন শেষ করে দিতে পারে এবং ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট তা পাল্টে দিতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনীয় জনগণ চূড়ান্ত আইনি ও রাজনৈতিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ইউক্রেন, রাশিয়া ও ইউরোপের কূটনীতিকদের তৈরি মিনস্ক চুক্তিতে ইউক্রেনীয় জনগণকে মোটাদাগে উপেক্ষা করা হয়েছে। রাশিয়ার দখলকৃত ক্রিমিয়া ও ডনবাসে রুশ সমর্থিত বিদ্রোহীদের সংঘাত সমাধানে এই চুক্তি করা হয়েছিল।

এখানে উল্লেখযোগ্য হলো, মিনস্ক চুক্তির ১১ ধারা অনুসারে ডনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ বিকেন্দ্রীকরণের জন্য ইউক্রেনের সংবিধানের সংশোধন প্রয়োজন।  চুক্তি ব্যর্থ হয় মূলত ইউক্রেনীয়দের সমর্থন না থাকায়। বিকেন্দ্রীকরণের সংস্কার প্রস্তাব ছিল তীব্র বিতর্কিত। এতে সহিংস বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। যা সংস্কারের সব সুযোগ বন্ধ করে দেয়।  

এছাড়া, ২০১৯ সালের একটি গণভোটে ইউক্রেনীয় জনগণ দেশটির সংবিধানে ন্যাটোর পূর্ণাঙ্গ সদস্য হওয়ার প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এতে মিনস্ক চুক্তি বাস্তবায়নের আরও রুদ্ধ করে দেয়। 

সংখ্যাগরিষ্ঠ ইউক্রেনীয় রাশিয়াকে ভূখণ্ড দিতে চায় না 

একটি শান্তি চুক্তি কেবল চতুর কূটনৈতিক দর কষাকষির ফল হতে পারে না, এই বাস্তবতা শান্তি আলোচনার সমর্থকদের মেনে নিতে হবে। এতে অবশ্যই গণতন্ত্রের বাস্তবতা এবং ইউক্রেনীয় রাজনীতিতে জনগণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে বিবেচনায় নিতে হবে। জনগণের ভূমিকা উপেক্ষা করা হবে বড় ভুল। আসলে এই যুদ্ধের ফলে রুশদের প্রতি ইউক্রেনীয়দের তীব্র ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। ফলে, এক প্রকার নিশ্চিত যে ইউক্রেনীয়রা এক ইঞ্চি ভূখণ্ডও রাশিয়ার হাতে তুলে দেবে না। একটি জরিপে দেখা গেছে, ৮৪ভাগ ইউক্রেনীয় রাশিয়াকে কোনও আঞ্চলিক ছাড় দিতে চান না। 

ইউক্রেনীয়দের মনোভাব সময়ের সঙ্গে পাল্টাতে পারে। বিশেষ করে যদি চুক্তি এমনভাবে তৈরি হয় যা ইউক্রেনীয় জনগণের সমর্থন পাবে।  কিন্তু এমন কিছু তৈরির ক্ষেত্রে শান্তিচুক্তির বিস্তারিত তৈরির করতে ইউক্রেনের ছাড় দেওয়ার জায়গা সংকুচিত করতে পারে।

কিন্তু, যদি এই বিষয়টি উপেক্ষা করা হয় তাহলে আরও পরিমিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো কঠিন হবে। 

দ্য কনভারসেশন অবলম্বনে

Source link

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Stream TV Pro News - Stream TV Pro World - Stream TV Pro Sports - Stream TV Pro Entertainment - Stream TV Pro Games - Stream TV Pro Real Free Instagram Followers PayPal Gift Card Generator Free Paypal Gift Cards Generator Free Discord Nitro Codes Free Fire Diamond Free Fire Diamonds Generator Clash of Clans Generator Roblox free Robux Free Robux PUBG Mobile Generator Free Robux 8 Ball Pool Brawl Stars Generator Apple Gift Card Best Android Apps, Games, Accessories, and Tips Free V Bucks Generator 2022