
বাংলা ভাষা নিয়ে এমন আয়োজন দুর্লভ
মাঠের মাঝখানে মস্ত বড় একটা বর্ণ ‘মা’। কচি হাতের রঙিন আঙুলের ছাপে ছাপে তা ভরে আছে। বিভিন্ন বয়সের শিশুরা মনের মতো রং দিয়ে আঁকছিল ‘মা’-কে। দুই হাতে রং মেখে আনন্দে মেতেছে শিশুরা।
রাজধানীর ধানমন্ডির সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে চলছে প্রথম আলোর বর্ণমেলা অনুষ্ঠান। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রথম আলো আয়োজন করেছে ‘বর্ণমেলা’। বর্ণমেলায় পৃষ্ঠপোষকতা করছে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্র্যান্ড মেরিল বেবি। সহযোগিতা করছে সেপনিল, সুপারমম ও এটিএন বাংলা।
বর্ণমালা উপলক্ষে সকাল থেকেই শিশুদের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠেছে সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স। বর্ণমালায় থাকা নানা আয়োজনে অংশ নিচ্ছে শিশুরা। শিশুদের তৈরি বর্ণের নকশা প্রদর্শন করা হচ্ছে। দোলনায় চড়ছে কেউ কেউ। বর্ণিল রঙে টি-শার্টের নকশা করছে। পুতুল বানানো দেখছে শিশুরা। নিজেরা বর্ণ তৈরি করছে।
সাভারের বাইপাইল থেকে মা-বাবার সঙ্গে বর্ণমেলায় এসেছে ৪ বছর বয়সী সুনান ফাতিহা। হাতের লেখার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সময় কথা হয় সুনানের মা কানিজ ফাতেমার সঙ্গে। তিনি বলেন, শিশুদের বাংলা ভাষায় উৎসাহিত করতে এমন আয়োজন ভালো লাগছে। খুব উৎসাহ নিয়ে মেয়ে অংশ নিতে এসেছে।
অনুষ্ঠানে আসেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, বাংলা ভাষা নিয়ে এমন আয়োজন দুর্লভ। মনে হয়, ৩৬৫ দিনই যদি এমন আয়োজন থাকত। মানুষের ভাষার প্রতি, বর্ণের প্রতি ভালোবাসা ও আবেগ অপরিসীম। সন্তানের মনে মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষার প্রতি দরদ জন্মাতে পারলে সে মানুষ হিসেবে অনেক দূর এগিয়ে যায়। তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, সন্তান মুঠোফোনে গেমস খেলে তাই মুঠোফোন ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে, এটা ঠিক না। মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলা সমাধান না। মুঠোফোন ব্যবহারের সীমা যেন লঙ্ঘন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বর্ণমেলার অন্যতম আকর্ষণ শিশুদের বর্ণ লেখার উদ্বোধন ‘হাতেখড়ি’। হাতেখড়ি দিতে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী আবুল বারক আলভি, ওয়াকিলুর রহমান, আবদুল মান্নান, আফজাল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক ও তারিক মনজুর। এবার ছিল ‘ব্রেইল হাতেখড়ি’র সুযোগ। ব্লাইন্ড এডুকেশন রিহ্যাবিলিটেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের আনিক হোসেনের ব্রেইল হাতেখড়ি হয় বর্ণমেলায়।
দিনভরের এই আয়োজনে মঞ্চে শিশুদের জন্য আসে সিসিমপুরের জনপ্রিয় চরিত্র হালুম, টুকটুকি, ইকরি ও শিকু। চলছে মজার পুতুলনাচ, জাদু প্রদর্শন। ঢাকা পাপেট থিয়েটার, গুফি ওয়ার্ল্ডের পরিবেশনা। সাংস্কৃতিক পর্বে অংশ নিয়েছে এক্সেল একাডেমি, সানিডেইল স্কুল ও নালন্দা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সকালে অনুষ্ঠিত চিত্রাঙ্কন ও হাতের লেখা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। সহজে নষ্ট হয় না, পছন্দের এমন যেকোনো বস্তু দিয়ে বর্ণ বানিয়ে পাঠিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। এসব বর্ণ দিয়ে বর্ণমেলায় আয়োজন করা হয়েছে প্রদর্শনীর। অনূর্ধ্ব ১০ বছর বয়সীরা মাকে চিঠি লিখেছিল। সেই ‘মায়ের কাছে চিঠি’গুলো নিয়েও বর্ণমেলায় প্রদর্শনী হচ্ছে। শখের জমানো পয়সা, ডাকটিকিট, পুরোনো খেলনা, চিঠির খাম নিয়ে শখের দুনিয়া প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিল অনেকে। তাদের মধ্য থেকেও বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়।
নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাংলা বর্ণ, ভাষা ও ভাষা আন্দোলনের মহিমা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রথম আলো এই বর্ণমেলার আয়োজন করছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে মাঝে কয়েক বছর বিরতি দিয়ে এবার আয়োজন করা হয়েছে বর্ণমেলার।