খেলা

‘বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার’ ও ‘শিক্ষক’ বাবার ঠিকানা এখন বৃদ্ধাশ্রম!

জুমবাংলা ডেস্ক : বাবা একটি আশা-ভরসা আর নিরাপদস্থলের নাম। বাবা মানে বটবৃক্ষ। বাবা মানে দীপ্ত বেগে সামনে ছুটে চলার প্রেরণা। উৎসাহ আর উদ্দীপনার বাতিঘর। অথচ যে বাবার শ্রম ও ঘামে সন্তানরা মানুষ হয়ে ওঠেন তারা এক সময় সেই বাবার দিকেই ফিরে তাকান না। বাবাকে বোঝা মনে করে অনেকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসেন। অথচ এই বাবাই ছিল তার এক সময়ের বেঁচে থাকার ছাদ। এখন অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও গড়ে উঠেছে অনেক বৃদ্ধাশ্রম। অনেক বাবার জায়গা হয়েছে সেসব বৃদ্ধাশ্রমে। এক সময় যে বাবা ছিলেন বুয়েট পাশ ইঞ্জিনিয়ার কিংবা মানুষ গড়ার কারিগর তাদের এখন দিনরাত কাটে পরিবার ছাড়া। নিঃস্ব জীবনের পড়ন্ত বেলায় কেমন আছেন তারা? তাদের ফেলে আসা দিনগুলো কেমন ছিল?

বাবাকে রাস্তায় ফেলে ছেলে চলে গেছে ফিলিপাইন!

মোস্তাক আহমেদ টিপু (৮০) বুয়েট থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। সর্বশেষ মোবাইল কোম্পানি এয়ারটেলের টাওয়ার মেইনটেন্যান্স বিভাগের সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, কাজ করার সময় একদিন টাওয়ার থেকে পড়ে যান তিনি। পুরো শরীর প্যারালাইজড হয়ে যায়। সেই থেকে বিছানায় তিনি। সব সেবা-যত্ন স্ত্রীই করতেন। এরই মাঝে একমাত্র ছেলে পড়াশুনা শেষ করে বিয়ে করে। স্ত্রীও মারা যান। ফলে পুরো একা হয়ে যান সাবেক এই ইঞ্জিনিয়ার। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ছেলে আর ছেলের বৌ খারাপ আচরণ করতে শুরু করে। একদিন রাতে মোহাম্মদপুরে বাসা থেকে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায় ছেলে। খবর পেয়ে তুলে নিয়ে আসে কল্যাণপুরের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার কর্তৃপক্ষ।

এক সময় সব থাকলেও আজ তিনি নিঃস্ব। একমাত্র ছেলে তাকে ফুটপাতে রেখে ফিলিপাইন চলে গেছে। সেই যে গেছে আর কোনোদিন খোঁজ নেয়নি। ছেলে বেঁচে আছে কিনা তাও জানেন না তিনি। আত্মীয়-স্বজনদের কেউ কখনো খোঁজ নিতে আসেনি।

শুক্রবার বিকেলে মোস্তাক আহমেদ টিপুর সাথে কথা হচ্ছিল চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে। তখন তিনি শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। কথা বলতে চাই শুনতে নিজে বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। পরে তাকে ধরে তোলা হয়। এখনো তার বাম হাত-পা তেমন সচল নয়। ফলে নিজের মতো কিছু করতে পারেন না।

কেমন আছেন জানতে চাইলে মুখের দিকে তাকিয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। এরপর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। কিছু না বলে চুপটি মেরে থাকলেন। এরই ফাঁকে অনেক কিছু জানার চেষ্টা চলছিল। হঠাৎ বলে উঠলেন, আই এ্যাম ফ্রম বুয়েট। আমার সব ছিল, আজ কিছু নেই। কেউ দেখতে আসে না। বৃদ্ধ মোস্তাক আহমেদ টিপুর দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে শুরু করলো। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও তখন স্তব্ধ। সাবেক এই বুয়েটিয়ান তার কষ্টের কথা কাউকে বলতে চান না। ছেলের কথা উঠলেই নীরব হয়ে যান।

স্কুলশিক্ষকের ঠিকানা এখন বৃদ্ধাশ্রম

বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাক আহমেদ টিপুর মতোই এখানে জায়গা হয়েছে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রামের সাবেক স্কুলশিক্ষক আব্দুর রশিদ মাস্টারের (৭০)। তার এলাকায় তাকে এখনো সবাই এক নামে চেনে। চারটি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীকে ‘মানুষ’ বানিয়েছেন। কিন্তু শেষ জীবনে নিজের সন্তানের কাছেই তার ঠাঁই হয়নি।

মেয়ের কথা উঠতেই বললেন, ছেলে-মেয়ে মারা গেছে। পরে জানা গেল তার এক ছেলে ছিল। কিন্তু সেই ছেলে একদিন না ফেরার দেশে চলে যান। এই স্কুলশিক্ষকের ফসল ভরা জমি ছিল। সেই জমি মেয়ে ও মেয়ের জামাই লিখে নেয়। এরপর তার আশ্রয় হয় বগুড়া শহরের একটি যাত্রী ছাউনিতে। অন্যের কাছে হাত পেতে খেয়ে না খেয়ে বছরখানেক সেখানেই পড়েছিলেন। পরে এক গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে করা প্রতিবেদনের মাধ্যমে তার খোঁজ পায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার কর্তৃপক্ষ।

সাবেক স্কুলশিক্ষক আব্দুর রশিদ ইংরেজিতে কথা বলছিলেন। কথার ফাঁকে জানালেন, তিনি এক সময় নাটোরের সিংড়া উপজেলার সিংড়া সাতপুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও নন্দীগ্রামের বিজুল উচ্চ বিদ্যালয় ছাড়াও আরও দুটি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি রাজনীতিও করেছেন। ছিলেন নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতিও। কিন্তু তার জীবনের সোনালী দিনগুলোর গল্প এখন শুধুই অতীত। কারণ এখন তার কেউ নেই। নেই মাথা গোজার ঠাঁইটুকুও। এখন স্থায়ী ঠিকানা মিরপুরের বৃদ্ধাশ্রম। এক ফাঁকে আক্ষেপ নিয়ে বলেন, তাকে কেউ দেখতে আসে না। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে এখানেই আছেন। আর গ্রামে ফেরা হবে কিনা জানেন না এই বাবা।

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের ম্যানেজার আরাফাত রহমান জানালেন, আব্দুর রশিদ মাস্টারের মতো আরও একজন মাস্টার আছেন সেখানে। তার নাম সেলিম মাস্টার। সেলিম মাস্টার চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা ছিলেন। তাকে দেশের তথ্যমন্ত্রীও চিনেন। জীবনে যা কামিয়েছেন তার সবটুকু দিয়ে মেয়েদের বড় করে বিয়ে দিয়েছিলেন। সেই মেয়েরাই তার সব কেড়ে নিয়ে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। তিনি এখন শয্যাশায়ী। তাকে চট্টগ্রাম থেকে উদ্ধারের পর কিছুদিন ভালো ছিলেন। এখন আর তেমন কথা বলতে পারেন না। শুয়ে শুয়ে তার দিন কাটছে। মেয়েরা জানেন তিনি ঢাকায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে আছেন, কিন্তু খোঁজ নেন না।

তিনি আরও জানালেন, তাদের বৃদ্ধাশ্রমে থাকা অধিকাংশ বাবাই বৃদ্ধ। অনেকে কথাও বলতে পারেন না। পরিবার-পরিজনের প্রসঙ্গ উঠলে শুধু কাঁদেন আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। তবে অনেকে এই করুণ অবস্থাকে ভাগ্যের লিখন হিসেবে মেনে নিয়েছেন।

Source link

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Stream TV Pro News - Stream TV Pro World - Stream TV Pro Sports - Stream TV Pro Entertainment - Stream TV Pro Games - Stream TV Pro Real Free Instagram Followers PayPal Gift Card Generator Free Paypal Gift Cards Generator Free Discord Nitro Codes Free Fire Diamond Free Fire Diamonds Generator Clash of Clans Generator Roblox free Robux Free Robux PUBG Mobile Generator Free Robux 8 Ball Pool Brawl Stars Generator Apple Gift Card Best Android Apps, Games, Accessories, and Tips Free V Bucks Generator 2022