আন্তর্জাতিক

ভারতে আগাম নির্বাচনের জল্পনা, শীতে ভোট বাংলাদেশের সঙ্গেই?

ভারতে আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসে যে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা—তা এগিয়ে এনে শীতকালেই করা হতে পারে, এই জল্পনা ক্রমশ প্রবলতর হচ্ছে। দেশের বেশ কয়েকজন বিরোধী নেতা যেমন এই সম্ভাবনার কথা প্রকাশ্যে বলেছেন, তেমনি সরকারের নেওয়া বেশ কয়েকটি পদক্ষেপেও এই জল্পনা উসকানি পেয়েছে।

ভোট এগিয়ে আনা হবে কিনা, তা নিয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকার অবশ্য প্রকাশ্যে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি। তবে সত্যিই যদি ২০২৩-এর ডিসেম্বরে কিংবা ২০২৪-এর জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে ভারতের নির্বাচন হয়, তাহলে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রায় একই সময়ে দু’দেশেই ভোট অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়ার কথা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে– আর প্রতিবেশী দুই দেশে ভোট একই সময়ে হলে তা হবে এক অভূতপূর্ব ঘটনা।

কিন্তু ভারতে ভোট এগিয়ে আনা হতে পারে, এই জল্পনা হঠাৎ কেন শুরু হলো?

মমতানীতিশের ঘোষণা

ভারতে বিরোধীদের জোট ‘ইন্ডিয়া’র গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি গত সোমবারেই কলকাতার এক সভায় ঘোষণা করেছিলেন, তার কাছে খবর আছে ভোট নাকি ডিসেম্বরে, কিংবা জানুয়ারিতে এগিয়ে আনা হতে পারে। তিনি বলেছিলেন, “ওরা আগেভাগে সব হেলিকপ্টার বুক করে রেখেছে, আমরা একটাও পাচ্ছি না। ভোট এগোবে বলেই এটা করেছে বলে জানতে পারছি।”

মমতা ব্যানার্জির এই বক্তব্যের পর দিনই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার জানান, তিনিও গত বেশ কয়েক মাস ধরে বলে আসছেন দেশের ভোট এগিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এদিকে আজ (বৃহস্পতিবার) থেকেই মুম্বাইতে ইন্ডিয়া জোটের তৃতীয় সমাবেশ শুরু হয়েছে– যেখানে রাহুল গান্ধী, মমতা ব্যানার্জি, নীতিশ কুমার, শরদ পাওয়ার-সহ বিরোধী জোটের সব নেতাই যোগ দিয়েছেন। ভোট এগোনো হতে পারে, সেটা ধরেই যে বিরোধী নেতারা তাদের পরিকল্পনার ছক কষছেন, মুম্বাইতে সেটাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

 

রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারে ভর্তুকি

এরইমধ্যে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার রাখি পূর্ণিমার আগের দিন (২৯ আগস্ট) আচমকা ঘোষণা করেন, রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার পিছু তারা ২০০ রুপি করে দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্যাবিনেট মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেন, দেশের সব ‘বোন’কে এটা ‘ভাই’ নরেন্দ্র মোদির রাখির উপহার– কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অনেকেই ধারণা করছেন ভোটকে সামনে রেখেই এই জনমোহিনী পদক্ষেপ। রান্নার গ্যাসের দাম এক ধাক্কায় ১১০০ রুপি থেকে ৯০০ রুপিতে কমিয়ে আনা হয়েছে

এই ভর্তুকি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বছরে প্রায় ৭৭ বিলিয়ন রুপি বাড়তি খরচ হবে– এই বিপুল অঙ্কের অর্থ কোষাগার থেকে খরচের সিদ্ধান্ত তখনই নেওয়া হয় যখন ভোট একেবারে দুয়ারে কড়া নাড়ে। গত দু-তিন বছরে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দামও বাড়তে বাড়তে ৭০০ রুপি থেকে প্রায় ১১০০ রুপিতে গিয়ে পৌঁছেছিল, আর তাকে ঘিরে অসন্তোষও ছিল প্রবল। ফলে রান্নার গ্যাসের দাম কমানোর সিদ্ধান্তও ভোট এগোনোর জল্পনাকে উসকে দিয়েছে।

পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশন ঘোষণা

এরইমধ্যে আজ (বৃহস্পতিবার) সরকার হঠাৎ করে ঘোষণা করেছে আগামী ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর এক সপ্তাহের জন্য পার্লামেন্টের একটি বিশেষ অধিবেশন ডাকা হচ্ছে। আগস্টে শেষ হওয়া বর্ষাকালীন (মনসুন) আর নভেম্বরে শুরু হওয়া শীতকালীন (উইন্টার) অধিবেশনের মধ্যে এভাবে ছোট আকারে বিশেষ অধিবেশন ডাকার রেওয়াজ নেই। ফলে ধরেই নেওয়া হচ্ছে বিশেষ কোনও গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনেই এই অধিবেশন ডাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সেটা কী, তা এখনও খোলাসা করা হয়নি। ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবন

কেন এই বিশেষ অধিবেশন, তা নিয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, ভারতের সাধারণ নির্বাচন আর সব রাজ্যের ভোট একসঙ্গে করানোর জন্য ‘ওয়ান নেশন ওয়ান ভোট’ বিল আনতেই এই অধিবেশন ডাকা হয়েছে। কেউ আবার বলছেন, ভারতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) চালু করার বিল আনতেই এই পদক্ষেপ। তবে এটা ঠিক, এটা এমন কোনও কারণে ডাকা হয়েছে যার জন্য সরকার শীতকালীন অধিবেশন অবধি অপেক্ষা করতে রাজি নয়– কিংবা হয়তো শীতকালীন অধিবেশন আর হবেই না। দিল্লিতে কোনও কোনও বিশ্লেষক এমনও ধারণা করছেন, হয়তো এই বিশেষ অধিবেশনের পরই প্রধানমন্ত্রী মোদি রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে লোকসভা ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করে আসবেন। 

চন্দ্রযান, জিটোয়েন্টির সাফল্য আরতিন প্রতিশ্রুতি’ 

ভারতের চন্দ্রযান-থ্রি সবে গত সপ্তাহেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করেছে, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ভারত যে কৃতিত্ব অর্জন করেছে এবং গোটা দেশ এখনও সেই সাফল্যের উদ্দীপনায় বুঁদ হয়ে আছে। এছাড়া আর দিনদশেকের মধ্যেই দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে জি-টোয়েন্টির শীর্ষ সম্মেলন, জোটের চেয়ার হিসেবে ভারত বৈঠকের আয়োজন করছে। নরেন্দ্র মোদির আতিথেয়তা গ্রহণ করে বিশ্বনেতারা দিল্লিতে আসছেন, ভারতকে সারা বিশ্ব নতুন মর্যাদায় ভূষিত করছে– এই অনুভূতিটাকেও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভোটের বাক্সে কাজে লাগানোর চেষ্টা হবে বলে অনেকে ধারণা করছেন। জি-টোয়েন্টির বর্তমান প্রেসিডেন্সি ভারতের কাছে

রাজনৈতিক দল হিসেবে বিজেপির বহু পুরোনো তিনটি অঙ্গীকার ছিল– কাশ্মিরের বিশেষ স্বীকৃতি লোপ, অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ আর দেশে ইউসিসি চালু করা। এরমধ্যে ২০১৯-এর আগস্টেই কাশ্মিরে ৩৭০ ধারা বিলোপ করে তারা প্রথম প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে। অযোধ্যায় রামমন্দিরও উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামী জানুয়ারিতে। আর এরমধ্যে ইউসিসি বিলও যদি তারা পার্লামেন্টে পাস করিয়ে নিতে পারে, তাহলে বিজেপি নির্বাচনি প্রচারে এটা বলার সুযোগ পাবে যে আমাদের পুরোনো তিনটা অঙ্গীকার অক্ষরে অক্ষরে পালন করেই আমরা ভোট চাইতে এসেছি! আর রামমন্দির উদ্বোধন যেহেতু জানুয়ারিতেই নির্ধারিত, তাই ওই সময় নাগাদ ভোট করে সেই ইস্যুর ফায়দা তোলার চেষ্টা করা হবে– এ রকমই ধারণা করা হচ্ছে। অযোধ্যায় রামমন্দিরের কাজ শেষ হলে যেমন দেখাবে

তবে শেষ পর্যন্ত মেয়াদ শেষের আগেই ভারতে লোকসভা ভেঙে দিয়ে ভোট এগোনো হবে কিনা, এই উত্তর একমাত্র নরেন্দ্র মোদি ছাড়া আর কারোরই জানা নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনা ও পদক্ষেপ থেকে এই সম্ভাবনা যে ক্রমেই জোরালো হচ্ছে, সে ইঙ্গিত কিন্তু স্পষ্ট!

 

Source link

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Stream TV Pro News - Stream TV Pro World - Stream TV Pro Sports - Stream TV Pro Entertainment - Stream TV Pro Games - Stream TV Pro Real Free Instagram Followers PayPal Gift Card Generator Free Paypal Gift Cards Generator Free Discord Nitro Codes Free Fire Diamond Free Fire Diamonds Generator Clash of Clans Generator Roblox free Robux Free Robux PUBG Mobile Generator Free Robux 8 Ball Pool Brawl Stars Generator Apple Gift Card Best Android Apps, Games, Accessories, and Tips Free V Bucks Generator 2022