খেলা

মানিকগঞ্জের বাঁশ-বেতের পণ্য যাচ্ছে সৌদি আরব

শফি আলম : মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় বাঁশ ও বেত শিল্পের নীরব বিপ্লব ঘটেছে। উপজেলার বড়টিয়া ইউনিয়নের শ্রীবাড়ি ঋষিপাড়া গ্রামের বাঁশ ও বেতের তৈরি আধুনিক ও সুদৃশ্য সামগ্রী এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এই গ্রামের ২০০ পরিবার বাঁশ ও বেত শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। দুইশত বছর ধরে বংশ পরম্পরায় এ পেশা আঁকড়ে ধরে আছে পরিবারগুলো। সেখানে অন্তত সাড়ে ৬০০ নারী-পুরুষ শ্রমিক রয়েছেন।

এখানকার সামগ্রী স্থানীয় বাজার ছাড়াও সাভার, চট্টগ্রাম, এলিফ্যান্ট রোড, ইস্কাটনের বাঁশ-বেতের সামগ্রীর দোকানগুলোতে নিয়মিত বিক্রি হয়। বিডি ক্রিয়েশন, ন্যাচার ক্রাফট, আড়ং, হিট বাংলাদেশ, তরঙ্গ প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য ক্রয় করে বিদেশে রপ্তানি করে থাকে। এখান থেকে বর্তমানে বাঁশ ও বেতের পণ্য যাচ্ছে জাপান, জার্মানি, ইতালি, কানাডা, ফ্রান্স, চীন, ভিয়েতনাম, ইংল্যান্ড, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে। প্রতি মাসে বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্য দেশের বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে ২০ লাখ টাকার ওপরে। আর বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে বাৎসরিক প্রায় ৬০ লাখ টাকার পণ্যসামগ্রী।

জানা যায়, এসব পণ্য স্থানীয় বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে এ শিল্পে ভাটা পড়েছে। পেশা বদল করেছেন অনেকেই। দিন দিন কমে আসছে শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সংখ্যা। এমন সময় ঐতিহ্যবাহী এই কুটির শিল্পকে রক্ষায় এগিয়ে আসেন উপজেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বাস্তবায়ন করা হয় কয়েকটি পাইলট প্রকল্প। এখানকার উৎপাদিত কুটির সামগ্রী অনলাইন ভিত্তিক বাজারজাতকরণের যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয় প্রশাসনের অর্থায়নে। ১৫০ সদস্যের একটি সমবায় সমিতির মাধ্যমে নিজেরাই তাদের পণ্যের বাজারজাত করছেন। বিক্রি করছেন দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের অন্তত ৮টি দেশে।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিম্ন আয়ের এই কুটির শিল্পীদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে নতুন অফিস ঘর। সেখানে রয়েছে ল্যাপটপ, প্রিন্টার, মডেম, ডিএসএলআর ক্যামেরা, রাউটারসহ অন্যান্য উপকরণ। দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ। এখানে বসেই অনলাইনে দেশ-বিদেশের ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পণ্যের নমুনা দেখাচ্ছেন। অর্ডার অনুযায়ী পণ্য তৈরি করে ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। ফলে ঘুরে যাচ্ছে তাদের ভাগ্য। আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠছে পরিবারগুলো।

সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের ঘরে ঘরে নারী পুরুষ বাঁশ ও বেত নিয়ে ব্যস্ত। নারীরা বাঁশ-বেতের বেণী তুলছেন, সেই বেণী দিয়ে পুরুষরা বুনছেন সামগ্রী। তাতে করছে সুই-সুতার কারুকার্যের সেলাই। বাঁশ- বেতের ঝুড়ি, ফুড বাস্কেট, পেপার বাস্কেট, ওভাল ট্রে, রাউন্ড ট্রে, স্কয়ার ট্রে, আয়নার ফ্রেম, লন্ডি বাস্কেট, দোলনা, লেমজার বাতি, মোড়া, চেয়ার, টেবিল, মহিলাদের ব্যাগ, ওয়ালমেট, খোল, ধামা, কাঠা, রিং, সিলিন্ডার, ফুটকাপ, দাঁড়িপাল্লা, টুড়ি, কুলা, ডালা, ঝুড়ি, চালুন, চাটাই মোড়া, খালোই, টুরকি, আর্মবেলা স্ট্যান্ড, হাতপাখা, ফুলের টপসহ বাঁশ ও বেতের ১০০ ডিজাইনের সামগ্রী তৈরি করছেন। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরাও এ কাজে সহায়তা করছে।

স্থানীয় বড়টিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল আলম মোল্লা রওশন বলেন, মানিকগঞ্জ জেলার মধ্যে বাঁশ ও বেত শিল্পের বড় একটি অংশ ঋষিপাড়া এলাকার। সরকারিভাবে তাদের অনলাইন মার্কেটিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। আশা করছি এ এলাকার বাঁশ বেত শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসার ঘটবে।

বাঁশ-বেত শিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি ভবদিশ সরকার বলেন, নিজেদের বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখতে বাঁশ-বেত শিল্পের সঙ্গে কয়েকশ পরিবার জড়িত রয়েছি। তবে বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি করা পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আমাদের পণ্য এখন বিশ্ব বাজারে। আমরা নতুন করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।

এ গ্রামের বাসিন্দা সিভিল প্রকৌশলী দেবাশীষ সরকার বলেন, চাকরির পিছে ছুটছি না। দেশের বিভিন্ন নামীদামী ব্র্যান্ড আমাদের তৈরি পণ্য নিয়ে দেশের বাইরে রপ্তানি করছে। এখন সরাসরি ক্রেতাদের পণ্য প্রদর্শন করে বিক্রি করছি। লাভবান হচ্ছে গোটা গ্রামের বাসিন্দারা।

চায়না রানী সরকার, আঁখি সরকার, মনিষা সরকার, স্বর্ণা সরকার নামে কয়েকজন নারী শ্রমিক বলেন, পরিবারের কাজ শেষে বিভিন্ন ধরনের বেতের কাজ করি। আমাদের কাজ হচ্ছে বুনানো, চাপানো, পরিচ্ছন্ন করা। দেশ-বিদেশে বিক্রি বাড়ছে। প্রতিমাসে একেকজন ১০ হাজার টাকার মতো আয় করি।

বাঁশ-বেত শিল্প সামগ্রীর অনলাইন অর্ডার ও পেমেন্টের দায়িত্বে থাকা এ গ্রামেরই বাসিন্দা অর্নপ সরকার বলেন, আমাদের সমিতির সদস্যদের তৈরি করা বিভিন্ন সামগ্রী অনলাইনে প্রদর্শন, অর্ডার নেওয়ার পাশাপাশি পণ্য সরবরাহ কাজে সহায়তা করছি। বিশ্বের ৮-৯ টি দেশের ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আমাদের তৈরি পণ্যের মান, ডিজাইন ও মূল্য তাদের বেশ পছন্দ। আশা করছি আগামী এক বছরের মধ্যে বিশ্ববাজারে ঘিওরের বাঁশ ও বেতে শিল্পের নাম থাকবে সম্মানের স্থানে।

উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ফারহিন আশরাফি বলেন, আমরা তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছি। এখন তাদের সমবায় সমিতি করে দেওয়া হয়েছে। ভালো কিছুর প্রত্যাশা করছি।

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা তাদের পণ্যের সঠিক দাম পাচ্ছিলেন না। এখানে ২০০ পরিবারকে এ পাইলট প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের সমবায় সমিতি গঠন করে দিয়েছি। অনলাইনে বিক্রির জন্য ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজসহ যাবতীয় উপকরণ সামগ্রী স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো ব্যবহার করে নিজেরাই নিজেদের পণ্যের বেচা-কেনা করছেন। কোনো মধ্যস্বত্বভোগী ফায়দা নিতে পারছে না। আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে ঘিওরের কুটির সামগ্রী।

জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল লতিফ বলেন, বড়টিয়ার অনগ্রসর কুটির শিল্পীদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতর ও মন্ত্রণালয়ে কয়েকটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। -ইত্তেফাক

রংপুর বিভাগ সমিতি, ঢাকা’র ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন

Source link

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Stream TV Pro News - Stream TV Pro World - Stream TV Pro Sports - Stream TV Pro Entertainment - Stream TV Pro Games - Stream TV Pro Real Free Instagram Followers PayPal Gift Card Generator Free Paypal Gift Cards Generator Free Discord Nitro Codes Free Fire Diamond Free Fire Diamonds Generator Clash of Clans Generator Roblox free Robux Free Robux PUBG Mobile Generator Free Robux 8 Ball Pool Brawl Stars Generator Apple Gift Card Best Android Apps, Games, Accessories, and Tips Free V Bucks Generator 2022