
মোগলহাট-গিতালদহ রেল সংযোগ পুনরায় চালু করতে সার্ভে
পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটার গিতালদহ-মোগলহাট বন্ধ রেল যোগাযোগ পুনরায় চালুর লক্ষ্যে সার্ভে শুরু করেছে রেল দফতর নিয়োজিত সংস্থা কার্টস ইণ্ডিয়া। গিতালদহে ধরলা নদীর ওপর রেল ব্রিজের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখেন সংস্থাটির প্রতিনিধিরা।
কার্টস ইণ্ডিয়ার সদস্য সৌরভ দাস ছাড়াও প্রতিনিধিদলে ছিলেন উত্তরবঙ্গের অন্যতম ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস, দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য সাধন সরকার, গিতালদহ ব্যবসায়ী সমিতির সুমন খন্দকার।
ব্যবসায়িক সংগঠনের তিন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে কার্টস ইণ্ডিয়া প্রতিনিধিদল ব্রিজটি ঘুরে দেখার পাশাপাশি কথা বলেন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে। ওই প্রতিনিধিদল রেল ব্রিজ ছাড়াও ইতোপূর্বে যেটা গিতালদহ জংশন স্টেশন ছিল সেই ঘরগুলোও ঘুরে দেখেন। এই ঘরের সামনেই লেখা রয়েছে গিতালদহ জংশন। বর্তমানে সেখানে বিএসএফের ক্যাম্প রয়েছে।
ব্যবসায়িক সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, গিতালদহ হয়ে মোগলহাট রেল যোগাযোগ ফের চালুর জন্য ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় রাজ্য সরকারের কাছে একাধিকবার দাবি জানানো হয়েছে। এমনকি রেল দফতরকেও পৃথকভাবে দাবি জানিয়ে এই পথ খোলার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। সার্ভের রিপোর্ট কার্টস ইণ্ডিয়ার পক্ষ থেকে রেল দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এরপর রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে এই পথ খোলার বিষয়টি নিয়ে পরিদর্শনে আসবেন। সেক্ষেত্রে দিনহাটার গিতালদহ হয়ে মোগলহাট রেলপথ পুনরায় খুললে ভুটান ও নিম্ন আসমের একটি বড় অংশের ব্যবসায়ীদের এই পথ দিয়ে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধা হবে। পরবর্তীতে যাত্রী পরিবহনেরও গুরুত্ব বাড়বে।
১৯৬৫ সালে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধের পরে মূলত এই পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তারপর দুই-একটি মালগাড়ি চললেও ১৯৬৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় রেললাইনের দুই পাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপর বন্ধ হয়ে যায় এই পথ। আজও খোলেনি। এই পথ খোলার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি উঠেছে। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যখন দিনহাটা এসেছিলেন তখন অনেকেই এই পথ খোলার জন্য তার কাছে আবেদন করেছিলেন। চিলাহাটি হলদিবাড়ি রেল রুট চালু হয়েছে।
গিতালদহের এই রুট যদি চালু হয় তাহলে নেপাল, ভুটান, আসাম ছাড়াও উত্তর-পূর্ব ভারতের যে রাজ্যগুলো রয়েছে সেই এলাকার ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের অনেকটাই সুবিধা হবে। উপকৃত হবে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সবাই। অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে এলাকাগুলো। এটিই ছিল প্রথম সার্ক রোড।
দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী জানান, বিভিন্ন স্মৃতি বিজড়িত বন্ধ এই রেলপথ পুনরায় খোলার জন্য উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের পাশাপাশি মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময় দাবিপত্র দেওয়া হয়। সেই ভিত্তিতে রেলের নিযুক্ত সংস্থার পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে একটি সার্ভে হয়েছে। ফের দ্বিতীয় সার্ভে হলো। এর আগে গত ডিসেম্বর মাসে ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের নিয়ে কার্টস ইণ্ডিয়ার প্রতিনিধি দল সার্ভে করেন। ওই সংস্থা তাদের দ্বিতীয় সার্ভে রিপোর্ট রেল দফতরের হাতে তুলে দেবে। পরবর্তীতে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে সবকিছু খতিয়ে দেখবেন। বন্ধ এই পথ খুলে গেলে এতদঞ্চলের আর্থ-সামাজিক যেমন পরিবর্তন ঘটবে তেমনি কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এই পথ খুলে গেলে ভুটান ও নিম্ন আসমের একটি বড় অংশের ব্যবসায়ীদের কাছে এই পথ দিয়ে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধা হবে। পণ্য পরিবহনে খরচ কমবে।