আন্তর্জাতিক

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ‘বড় লড়াই’ কি আসন্ন?

ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের এক বছর পূর্ণ হতে আর খুব বেশি দেরি নেই। দিনের হিসেবে এক বছরের কাছাকাছি চলে গেলেও এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে রাশিয়া নিজেদের সামরিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। শুরুতেই কিয়েভ দখলে ব্যর্থ হওয়া রুশ বাহিনী প্রত্যক্ষ করেছে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের ব্যর্থতার। আক্রমণের শুরুতে দখল করা একাধিক এলাকাও পাল্টা আক্রমণে রাশিয়ার কাছ থেকে দখলমুক্ত করেছে ইউক্রেন। চলমান শীতে রুশ আক্রমণ ও ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ কিছুটা মন্থর থাকলেও থামেনি। বেশ কয়েকটি ভয়াবহ হামলা-পাল্টা হামলা চালিয়েছে উভয় বাহিনী। প্রায় অচলাবস্থায় পর্যবেসিত হওয়া যুদ্ধপরিস্থিতি শীতের পরপরই আরও তীব্র হতে পারে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দিনগুলোতে চলমান যুদ্ধ সবচেয়ে ভয়াবহ ধাপে গড়াতে পারে।

ইউক্রেনের জাপোরিজ্জিয়ার হুলিয়াইপোল শহরের উপকণ্ঠে স্বচ্ছ আকাশে বজ্রপাতের বিকট শব্দের মতো কামানের গোলার বিস্ফোরণ। বেশ কিছুদিন ধরে সংঘাতের গতি বেড়েছে এখানে। অঞ্চলটিতে বড় ধরনের একটি যুদ্ধ আসন্ন।

রুশ সেনাবাহিনী রবিবার (৩০ জানুয়ারি) ঘোষণা করেছে, তারা জাপোরিজ্জিয়া অঞ্চলে নতুন হামলা শুরু করেছে, কিন্তু ইউক্রেনীয় সেনাদের কিছুটা অস্থির বলে মনে হচ্ছে। যদিও এই ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ শুরুর ১০ মাসে একবারের জন্যও সরেনি ইউক্রেনীয় সেনারা।

ইউক্রেনের জ্যেষ্ঠ সার্জেন্ট ভিটালি বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহে কামান ও এমনকি ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণের সঙ্গে কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু রুশ বাহিনী ফ্রন্টলাইনে পদাতিক বাহিনী পাঠায়নি, আসলে তারা ভীত।

প্রচণ্ড শীতে রণক্ষেত্র জমে গিয়েছিল কিছুদিন আগেও। তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সার্জেন্ট ভিটালি বলছেন, ধীরে ধীরে আকাশ পরিষ্কার হচ্ছে, ফলে হিম শীতল পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, উষ্ণতা বাড়ছে।

দক্ষিণ রণক্ষেত্রের দিকে দূর থেকে রকেট ও শেল উড়ে আসার সংখ্যা চলতি মাসে দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ৪ হাজার ছাড়িয়েছে। দুই মাস আগে এখানে পরিস্থিতি বুঝতে কিছু হালকা ট্যাংক পাঠিয়েছিল মস্কো। যদিও পরে আর সেগুলোকে দেখা যায়নি। এমন থমথমে পরিস্থিতি খুব বেশি দিন চলবে বলে মনে হয় না। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে যেকোনও এক পক্ষ পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে আনতে পদক্ষেপ নিতে পারে। পাশাপাশি অচলাবস্থা ভাঙার চেষ্টাও করবে। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রথমে কে এবং কোথায় আঘাত হানবে।

ইউক্রেনে এখন শীতকাল। শীতের পরপরই অথবা শীতের শেষ দিকে বড় ধরনের যুদ্ধ হতে পারে বলে মনে করছেন সার্জেন্ট ভিটালি। তার আশঙ্কা, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়ায় যুদ্ধটি আসন্ন দিনগুলোতে সর্বোচ্চ সংঘাতে পৌঁছাতে পারে। তবে লড়াই শুরুর আগে প্রতিরক্ষা ব্যব্স্থা শক্তিশালী করতে সময়টাকে কাজে লাগিয়ে নিচ্ছে উভয়পক্ষ।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ‘বড় লড়াই’ কি আসন্ন?

পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভিটালির সেনারা প্রতিদিনই নিজেদের ঘাঁটির শক্তি বাড়াচ্ছে। দক্ষিণ সমতলজুড়ে আরও দুটি প্রতিরক্ষা লাইন তৈরি করেছে ইউক্রেন। যার মধ্যে মাইনফিল্ড, স্লিট ট্রেঞ্চ, ট্যাংকের ফাঁদ এবং ড্রাগনের দাঁত নামে পরিচিত ছোট কংক্রিটের পিরামিডের ফালানক্স রয়েছে।

মস্কো নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের মেলিটোপোল শহর এবং সেখানকার একটি রেললাইন রক্ষা করা ইউক্রেনীয় সেনাদের জন্য কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রেল পথ ধরে রাশিয়া থেকে সামরিক সরঞ্জাম প্রবেশ করছে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে। বড় ধরনের লড়াইয়ের আঁচ পেয়ে মেলিটোপোলের পার্শ্ববর্তী শহর পলিয়ানিভকার লোকজনকে চলতি মাসেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা প্রাচীরের একটি অংশ হিসেবে জায়গাটিকে বিবেচনা করা হচ্ছে।

ইউক্রেনীয়রা কীভাবে আক্রমণ শুরু করবে অথবা কেমন রণকৌশল সাজাচ্ছে- এসব তথ্য গোপনে হাতিয়ে নিতে পারে মস্কো। তাই এই বিষয়ে খুব সতর্ক জেলেনস্কির বাহিনী। রুশ বাহিনী ক্রিমিয়া থেকে ডনেস্ক ও লুহানস্কের পূর্ব দিকে সামরিক ইউনিটগুলো নিয়ে যাচ্ছে রণকৌশলনের অংশ হিসেবে। ফলে ড্রোন, স্যাটেলাইট এবং বিভিন্ন উৎসের মাধ্যমে গোপনীয়তার সঙ্গে রুশ সামরিক ইউনিটগুলোকে নজরে রেখেছে ইউক্রেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার বাহিনীকে নিয়মিত পুনর্গঠনের চেষ্টা করছেন। শুরুর দিকে ট্যাংক এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে ইউক্রেনের একাধিক শহরে তার নির্দেশে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রুশ বাহিনী। প্রথমে বেশ কিছু শহর, গ্রাম দখলে নিলেও এখন বিপর্যয়ের মুখে তার সেনারা।

এমন বাস্তবতায় সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধে অভিযান পরিচালনার মূল দায়িত্ব রুশ জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভকে দিয়েছেন পুতিন। তার এই নিয়োগ পাওয়াকে বড় ধরনের আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন অনেক বিশ্লেষক। ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক আক্রমণের প্রথম পর্বটি পরাজয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল। পরবর্তীতে রুশ সেনাবাহিনীকে উত্তর থেকে খারকিভ অঞ্চল, এরপর খেরসনে সরিয়ে নেওয়া হয়। নভেম্বরে ডিনিপ্রো নদীর পশ্চিম তীরে নিয়ে যাওয়া হয়।

যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্বটি ছিল মস্কোর জন্য আরও বড় একটা ট্র্যাজেডি। ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর বাখমুত এবং সোলেদারের মতো শহরের আশাপাশ দখল করতে গিয়ে লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছে হাজার হাজার রুশ ভাড়াটে যোদ্ধা। এমন ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ হয়ে ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে মস্কো। শুধু তাই নয়, ইউক্রেনের পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও রুশ হামলা থেকে বাদ যায়নি। ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সাময়িক বিপর্যয় তৈরি হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে কাজ করছে জেলেনস্কির সরকার।

প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় পর্যায়েও ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি রাশিয়া। তারপরও ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোয় ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে। এখন তৃতীয় পর্যায়ের হামলা শুরু হতে চলছে। যা আরও ধ্বংসাত্মক হতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সালে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার মধ্যে একটা ভয়াবহ যুদ্ধ দেখেছিল বিশ্ব। শুরুটা হয়েছিল ১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল। যা ‘বসনিয়া’ যুদ্ধ নামে পরিচিতি লাভ করে। এতে এক লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়। তবে হতাহতের সংখ্যাটা কম বেশি হতে পারে। নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ, এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল সার্ব বাহিনী।

ঠিক একইভাবে ইউক্রেন যুদ্ধেও অধিকাংশ বেসামরিক ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছে রুশ সেনাদের হামলায়। কিয়েভের দাবি, ইউক্রেনে চলা যুদ্ধে নিহত এক লাখে পৌঁছেছে। নরওয়ের গোয়েন্দাদের মতে, রুশ বাহিনী আহত ও নিহতের সংখ্যা হবে ১ লাখ ৮০ হাজার।

এই লড়াইয়ে বিজয় অর্জনের জন্য রাশিয়াকে তিনগুণ শক্তিশালী হতে হবে। কিন্তু পশ্চিমাদের থেকে সামরিক সহায়তা পাওয়ায় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও মজবুত হয়েছে ইউক্রেনের। এর মধ্যে হিমার্স, রকেট, গোলাবারুদসহ অত্যাধুনিক ট্যাংক পাচ্ছে কিয়েভ। ফলে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে রুশ বাহিনীর সাফল্য পাওয়া বেশ কঠিন। তবে সব ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে এবং অগগ্রতি অর্জনে একটা শক্তিশালী বাহিনী গঠনের তোড়জোড় এখনও চালিয়ে যাচ্ছে পুতিনের প্রশাসন। মস্কোর এখনও যথেষ্ট সেনা রিজার্ভে রয়েছে।

গত বছরের শেষ দিকে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য তিন লাখ সেনা সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছিলেন পুতিন। এদের মধ্যে দেড় লাখকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে রাশিয়া সম্ভবত নতুন সামরিক বহর তৈরি করছে। কার্যকরভাবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর মতো পরিস্থিতিতে রুশ বাহিনী রয়েছে কিনা, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে।

রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা নিয়ে পেন্টাগনের সাবেক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক দারা ম্যাসিকট বলেন, তারা গত বছরেই একটি বিজয় অর্জনের চেষ্টা করেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। যে বাহিনী ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে আছে তারা পেশাদার নয়। তাদের যুদ্ধের সরঞ্জামগুলোও ততটা আধুনিক নয়। কিন্তু দুর্বল নেতৃত্ব, স্বল্প প্রশিক্ষিত সেনারাও যেকোনও সময় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে। কারণ প্রতি সপ্তাহে সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, পুনরায় সজ্জিত করতে পারা হতে পারে রাশিয়ার জন্য আরেকটি সুযোগ।

Source link

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Stream TV Pro News - Stream TV Pro World - Stream TV Pro Sports - Stream TV Pro Entertainment - Stream TV Pro Games - Stream TV Pro Real Free Instagram Followers PayPal Gift Card Generator Free Paypal Gift Cards Generator Free Discord Nitro Codes Free Fire Diamond Free Fire Diamonds Generator Clash of Clans Generator Roblox free Robux Free Robux PUBG Mobile Generator Free Robux 8 Ball Pool Brawl Stars Generator Apple Gift Card Best Android Apps, Games, Accessories, and Tips Free V Bucks Generator 2022