আন্তর্জাতিক

স্কুলে যেতে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত অতিক্রম

তেরো বছরের মার্সেলো জেসুস গৌরিউ এবং তার নয় বছর বয়সী ভাই প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার তাদের বাড়ি থেকে রওনা দেয়। স্কুলে যাওয়ার জন্য তাদেকে ভোর সাড়ে চারটার দিকে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। তাদের বাড়ি ভেনেজুয়েলার ছোট শহর ক্যালিতে। কিন্তু তাদেরকে স্কুলে যেতে ভেনেজুয়েলার সীমান্ত অতিক্রম করে কলম্বিয়া পৌঁছাতে  হয়।

ভোরে দুই শিশু অন্ধকারের মধ্যেই রওনা দেয়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে সঙ্গীহীন হেঁটে তারা স্কুলে পৌঁছায়। তারা প্যারাগুয়াচন শহরে তাদের স্কুলে পৌঁছানোর জন্য ‘ট্রোচাস’ নামে পরিচিত অনানুষ্ঠানিক সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে কলম্বিয়ায় চলে যায়। তাদের ক্লাস শুরু হয় সাড়ে ছয় টায়।

কলম্বিয়ার উত্তর প্রান্তে অবস্থিত এই অঞ্চলের ট্রোচাসগুলো হলো বিপজ্জনক গ্রামীণ আবর্জনায় ভর্তি পথ। স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। এই পথে সীমান্ত অতিক্রমকারীদের কাছ থেকে প্রায় সময়েই অর্থ আদায় করা হয়।

মার্সেলো প্রতিদিন এই সীমান্ত ক্রসিং অতিক্রম করার সময় ভয় পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। হয়ত এটি কৈশোরের সাহসিকতার প্রকাশ। তার কথায়, আমি কলম্বিয়ার স্কুলে যেতে পছন্দ করি। আমাদের বাড়ির এলাকায় পড়ার মতো সুযোগ নেই।

ভেনেজুয়েলার বিধ্বস্ত অর্থনীতি এবং চলমান আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক সংকট অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বন্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। গ্রামীণ স্কুলগুলো অবহেলিত এবং প্রায় অচল, সপ্তাহে মাত্র কয়েক দিন পড়ানো হয় এবং শিক্ষকের চরম ঘাটতি রয়েছে। এর ফলে মার্সেলোর মতো ভেনেজুয়েলার শিশুরা বিপজ্জনক সীমান্ত অতিক্রমের ঝুঁকি নিতে বাধ্য হচ্ছে।

মার্সেলো কলম্বিয়ার যে স্কুলে যায় সেটির নাম হলো সেন্ট্রো এডুকেটিভো ইন্ডিজেনা নিউমেরো ৬। এই স্কুলের ১ হাজার ২৭০ জনের মধ্যে ৪০ শতাংশ হলো ভেনেজুয়েলার শিশু। ভালো স্কুলে পড়াশোনার জন্য তারা কলম্বিয়ার স্কুলে ভর্তি হয়েছে। ভেনেজুয়েলার এসব শিশুদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি এই ঝুঁকিপূর্ণ ‘ট্রোচাস’ ব্যবহার করে।

সবাই অবশ্য মার্সেলোর মতো সাহসী কথা বলছে না। তার এক সহপাঠী স্বীকার করেছে, এসব ট্রোচা বিপজ্জনক। তার কথায়, কখনও কখনও আমি স্কুলে যাই এবং মাঝে মধ্যে যাই না।

মার্সেলো সহপাঠীর উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কারণ রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের পরামর্শদাতা ব্রাম ইবাসের মতে, এই ট্রোচাসগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সহিংস সংঘর্ষ অস্বাভাবিক নয়। সীমান্ত অতিক্রমে অর্থ আদায় ছাড়াও অপরাধী গোষ্ঠীগুলো মাদক এবং অবৈধ সোনা পরিবহনের জন্য বা চোরাকারবারীদের অর্থের বিনিময়ে ট্রোচাস ব্যবহার করতে দেয়।

কোনও কোনও শিশুকে স্কুলে নিয়ে আসেন অভিভাবকরা। ছবি: আন্তন আলেক্সান্ডার লোপেজ/বিবিসি

অভিভাবকরাও এই ঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু সন্তানদের শিক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য সীমান্তে বসবাসকারী অনেক ভেনেজুয়েলান পরিবারের কাছে বিপজ্জনক ট্রোচাস দিয়ে সন্তানদের কলম্বিয়ার স্কুলে পাঠানোই একমাত্র উপায়।

ঝুঁকি কমাতে অভিভাবকরা সন্তানদের সঙ্গে যেতে পারেন। অনেকেই এমনটি করেন। কিন্তু ভেনেজুয়েলার অনিশ্চিত অর্থনীতির কারণে অনেক বাবা-মাকে কাজ করতে হয়। ফলে সব অভিভাবক সন্তানের সঙ্গে যেতে পারেন না।

মার্সেলোর সহপাঠীর মা এমন দ্বিধার মুখোমুখি হন। প্রায় সময় তিনি সন্তানকে স্কুলে না পাঠিয়ে বাড়িতেই রাখতে পছন্দ করেন। ছেলেটির কথায়, আজকাল আমি খুব কম স্কুলে আসি। কারণ আমার মা আমাকে একা ট্রোচাস দিয়ে স্কুলে পাঠাতে চান না।

ভেনেজুয়েলা এবং কলম্বিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে বরফ গলার কারণে সীমান্ত পার হওয়ার একমাত্র উপায় এখন আর ট্রোচাস নয়।

কেউ কেউ বাহন পেলেও বেশিরভাগকে হেঁটে যেতে হয় স্কুলে। ছবি: আন্তন আলেক্সান্ডার লোপেজ/বিবিসি

সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জানুয়ারিতে সীমান্তটি সম্পূর্ণরূপে পুনরায় চালু করা হয়েছিল। কিন্তু কলম্বিয়া এবং ভেনিজুয়েলার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের পুনঃস্থাপন এখনও স্থানীয়দের দৈনন্দিন জীবনে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে।

ইবাস বলছেন, সরকারি সীমান্ত ক্রসিংয়ের দীর্ঘ পথচলার বদলে অনেকের কাছে অঘোষিত ট্রোচাস সুবিধাজনক বিকল্প। এছাড়া অনেকের কাছে সরকারি ক্রসিং পার হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাব রয়েছে। আমলাতান্ত্রিক বাধা, আইনি অস্পষ্টতা এবং বেশি খরচের কারণে সীমান্ত পারাপারে বৈধ নথি পাওয়া অনেক ভেনেজুয়েলানের জন্য ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

মার্সেলোর স্কুলের কর্মকর্তাদের অনুমান, প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী এখনও অঘোষিত ট্রোচা ব্যবহার করে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জর্জিনা ডেলুকুয়েজ বলেছেন, আমাদের ছাত্রদের মতো যারা ট্রোচাসের মধ্য দিয়ে আসে, তাদের অন্য কোনও বিকল্প নেই। ভেনিজুয়েলার শিক্ষার্থীদের আগমন তার স্কুলের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। ভেনিজুয়েলায় যা কিছু ঘটে সেগুলোর সবকিছুই কলোম্বিয়াতে প্রভাব ফেলে। যতদিন ভেনিজুয়েলায় সংকট চলতে থাকবে, ততদিন শিশুরা আসতে থাকবে এবং তাদের যত্ন নেওয়ার সক্ষমতা আমাদের নেই।

সাড়ে ছয়টায় পাঠদান শুরু হয়। ছবি: আন্তন আলেক্সান্ডার লোপেজ/বিবিসি

শুধু চলতি মাসে স্কুলে ১১ নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। এদের বেশিরভাগই ভেনেজুয়েলান।

কিন্তু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রধান শিক্ষিকা জর্জিনা ডেলুকুয়েজ বলেন, আমরা কীভাবে তাদের বাদ দিতে পারি? যদি এটি সীমান্ত অঞ্চলের একমাত্র স্কুল হয় তাহলে আমি কীভাবে তাদের না বলতে পারি। আমরা যদি তাদের ভর্তি না করি তাহলে এই শিশুরা কোথায় পড়বে?

সূত্র: বিবিসি

 

Source link

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Stream TV Pro News - Stream TV Pro World - Stream TV Pro Sports - Stream TV Pro Entertainment - Stream TV Pro Games - Stream TV Pro Real Free Instagram Followers PayPal Gift Card Generator Free Paypal Gift Cards Generator Free Discord Nitro Codes Free Fire Diamond Free Fire Diamonds Generator Clash of Clans Generator Roblox free Robux Free Robux PUBG Mobile Generator Free Robux 8 Ball Pool Brawl Stars Generator Apple Gift Card Best Android Apps, Games, Accessories, and Tips Free V Bucks Generator 2022